গাজীপুরে উদ্ধারকৃত ১৬টি গ্রেনেডের সঙ্গে ২১ আগস্ট হামলার গ্রেনেডের মিল রয়েছে: পুলিশ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলায় যে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল, তার সাথে গাজীপুরে মাটির নীচে পাওয়া গ্রেনেডের মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন অভিজাত আবাসিক দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমিতে গতকাল (সোমবার) সকালে মাটি খননের সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৬টি আরজেএস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডেসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান এই তথ্য জানান। পরে বিকালে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ক্রিয় করে।
উদ্ধার করা গ্রেনেড নিস্ক্রিয় করার পর সাংবাদিকদের মাহমুদুজ্জামান বলেন, "আপনারা জানেন, আরজেএস গ্রেনেড আমাদের দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার আছে। আমরা ফরেনসিক চেক করব। এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাবো। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাতে পারবেন, এটি কবেকার গ্রেনেড।"
স্থানীয় লোকজন জানায়, গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ ছায়াবিথী আবাসিক এলাকার যে জায়গা থেকে গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে সে জায়গা থেকে মাত্র দুইশ মিটার দক্ষিণে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বাড়ি।
তিন তলা বাড়িটির নাম 'খোয়াব ভবন'। এখানে তারেক রহমান যাতায়াত করতেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজাও দিয়েছে আদালত।
সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান বলেন, "আজ সকাল বেলা আমরা ফোন পাই যে, গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথি এলাকায় মাটি খননের সময় বিস্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে। এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আমরা আমাদের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি এবং একটি মটকার (মাটির কলসি) ভিতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড দেখতে পাই।"
মাহমুদুজ্জামান আরও বলেন, "জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যে কারণে আমরা আরওভি রোবট (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) এর মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রেনেড দেখার চেষ্টা করি যে, পিনগুলো অক্ষত আছে কি-না। কারণ গ্রেনেডের পিন খুলে গেলে এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।"
"আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেডগুলো আলাদা করতে সক্ষম হই। পরে আমাদের টিমের দুইজন সদস্য বোম্ব শ্যুট পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করে", যোগ করেন তিনি।
গ্রেনেডগুলো কোন দেশের ও কতদিন আগের তা জানতে চাইলে মাহমুদুজ্জামান বলেন, "এটি কোন দেশের তা বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্রেনেডের গায়ে আমরা কোন ম্যানুফ্যাকচারিং মার্ক বা এরকম কোন কিছু পাইনি। গ্রেনেডগুলো অনেক আগের, তাই বলতে পারছি না এটি কোন দেশের তৈরি। স্পেসিফিক কতদিন আগে এটি আসলে বলা সম্ভব নয়। এটা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার আছে।"
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন, "প্রত্যেকটি গ্রেনেড লাইভ ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এন্টি গ্রেনেডগুলো একটি মটকার ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। অনেক আগের হওয়ায় এগুলো সেপারেট করা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবু আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড ডিসপোজ করতে সক্ষম হয়েছি।"
গ্রেনেড কতদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকে জানতে চাইলে মাহমুদুজ্জমান বলেন, "এগুলো বিস্ফোরণ অথবা ডিসপোজ করার আগ পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। যে কোনো সময় এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।"
কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাশেম মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছেন। সম্প্রতি ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নেন।
গতকাল (সোমবার) সকালে শ্রমিকরা জমিতে মাটি খনন শুরু করেন। এইসময় সকাল ৯টার দিকে ৩-৪ ফিট গর্তের ভেতর থেকে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। কোদালের আঘাত কলসটি ভেঙে গেলে ভেতরে গ্রেনেড দেখা যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা এসে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এগুলো পরিত্যক্ত বলে ধারণা করে।
জমির মালিক আবুল কাশেম বলেন, "শ্রমিকরা সকাল ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানান। প্রথমে আমি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করি। পরে সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।"