ঈদের বন্ধের কারণে জুনে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি সামান্য কমেছে
ঈদের কারণে ব্যাংক খাত বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকার কারণে জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুনে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৫.১৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খুলেছে। মে মাসে খোলা হয়েছিল ৬.৮৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি। অবশ্য জুনে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি খোলা বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬৮.১৯ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলসি খোলা হয়েছে ৬৬.৯৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের তুলনায় গত অর্থবছরে প্রায় ১.৮৫ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে।
জুন মাসে এলসি খোলা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জানান, এ মাসে ঈদের বন্ধ থাকার কারণে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কিছুটা কমেছে।
তবে এলসি খোলা নিষ্পত্তি কমলেও জুনে ডলারের প্রবাহ ভালো ছিল। এমনিতে গত অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের কম। তবে জুনে দেশের ব্যাংক খাত রেমিট্যান্স পেয়েছে ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি, ডলারের রেট বেড়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের রেমিট্যান্স আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০.৬৬ শতাংশ। বেড়েছে। গত মে মাসে বিনিময় হারের ক্রলিং পেগ চালু হওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে।
ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলে, জুনে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কম হওয়ার মূল কারণ ঈদের কারণে বেশ কয়েকদিন ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকা। 'এছাড়া ঈদের মাসে এলসি খোলার চাহিদাও অন্য সময়ের তুলনায় কম হয়।'
ডলারের তারল্য পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এর পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়া, এবং দ্বিতীয়ত, এলসি খোলার চাহিদা কমে আসা। এছাড়া অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অফশোর অ্যাকাউন্টে ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট করতে শুরু করায় সামনের দিনগুলোতে ডলার প্রবাহ বাড়বে আশা করছি।'
চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এলসি কিছুটা কম খোলা হলেও গম ও সারের এলসি খোলার চাহিদা বাড়ায় এ মাসের বাকি সময়ে এলসি খোলা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আমদানি ব্যয় কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দেড় বছর ধরে আমদানি এলসি খোলায় শতভাগ মার্জিন রাখা, বিলাসদ্রব্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করাসহ অনেক পদক্ষেপই নিচ্ছে। এতে আমদানি কমে দেশের ব্যলান্স অভ পেমেন্ট-এর ট্রেড ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সের উন্নতি হলেও সরকারি ও বেসরকারি ঋণ পরিশোধের চাপ ও ট্রেড ক্রেডিট বাড়ায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
জুনে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি কিছুটা কমেছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন মাসে ব্যাংকগুলো আমদানি এলসির পেমেন্ট করেছে ৫.২ বিলিয়ন ডলার। মে মাসের তুলনায় এটি কিছুটা কম। তবে আগের অর্থবছরের জুনের তুলনায় এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডেফারড এলসি পেমেন্টের চাপ আগের তুলনায় কমে এসেছে। কারণ, বিনিময় হারের ঝুঁকি এড়াতে ব্যাংকগুলো ডেফারড এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছিল। এসব কারণে পেমেন্টও কমে এসেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৭২.৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৯.৪৭ শতাংশ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো এলসি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১১৮.৬০ থেকে ১১৮.৯০ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করছে। এছাড়া রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছে সর্বোচ্চ ১১৮.৫০ টাকা রেটে।