বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার কর্মী নেবে ইইউভুক্ত চার দেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চারটি দেশ ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার কর্মী নেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, 'এই তিন হাজার কর্মীর দক্ষতার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নেওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত।'
আজ রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইইউ'র রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বিদায়ী সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও ২০৩২ সাল পর্যন্ত আমাদের পণ্যের জন্য ইইউ থেকে জিএসপি বা শুল্ক হ্রাস সুবিধাসহ অন্যান্য যেসব সুবিধা এখন আমরা পাই, সেগুলো যেন অব্যাহত থাকে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।'
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিতীয় বিমসটেক রিট্রিট সম্মেলনের বিষয়ে মন্ত্রী জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, চিকিৎসা, জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে সহায়তা এবং নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সবুজ শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি নিয়ে রিট্রিটে কথা হয়েছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ।
রিট্রিটের সাইডলাইনে ভারত ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন হাছান মাহমুদ। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য পচনশীল পণ্য আমদানিতে আবারও কোটা নির্ধারণ, তিস্তা বিষয়ে কারিগরি দল পাঠানো, ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তি ও জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। কিন্তু সেটি রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার নিন্দা
এদিকে সাংবাদিকরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। রাজনীতিতে আমরা কোনো সংঘাত চাই না।'
তিনি আরও বলেন, 'অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কখনও ভায়োলেন্স ছিল না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ হামলায় আমরা কনসার্ন এবং আমরা নিন্দা জানাই। রাজনীতিতে ভায়োলেন্স থাকা উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।'
চলমান কোটা আন্দোলনের যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, সেটির কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। এটি আসলে আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলিও বটে। সরকার সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তাই কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। তবে বাতিল করার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। যেমন- অনেক জেলা থেকে অনেক ক্যাডারে কেউ সুযোগ পাচ্ছে না, মেয়েদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'কোটা আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়। তাই এর ওপর সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। আদালতের মাধ্যমেই এর সমাধান হতে হবে।'
কোটা আন্দোলন থেকে বিএনপি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, 'বিএনপি তো সবসময় চায় দেশকে অস্থিতিশীল করতে। নিজেদের তো কিছু করার ক্ষমতা নেই, তারা অপরের ঘাড়ে চেপে বসে। কোনো সময় কোটার ওপর ভর করে, কোনো সময় তেল-গ্যাসের ওপর ভর করে, কোনো সময় আবার অন্য কিছুর ওপর ভর করে। বিএনপি কোটা আন্দোলন থেকেও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পর সুপ্রিম কোর্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ সরকার যে কোটা বাতিল করেছিল, সেটিই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এরপরও যখন আন্দোলন হয় বুঝতে হবে এটির সঙ্গে রাজনীতি যুক্ত হয়েছে।'