চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ৩
চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় কোটাসংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা সোয়া ৩টার দিকে সংঘর্ষ বাধে। এসময় অস্ত্রধারীদের গুলি করতে দেখা যায়।
সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
তাদের মরদেহ চমেকের মর্গে রাখা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় নগরীর ষোলশহর স্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তবে সকাল থেকে কর্মসূচির স্থানে অবস্থান নিয়েছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে কোটসংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ষোলশহর স্টেশনের কয়েকশ গজ দূরে নগরীর মুরাদপুরে অবস্থান নেন। তখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম আকরাম (২২) নামে নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ফারুক একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে থাকতেন। নিহত অপরজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। তিনি বলেন, আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসক।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আশরাফুল করিম বলেন, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিন হয়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক। আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তাদের সংখ্যা এখন বলা যাচ্ছে না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এসময় গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। মুরাদপুর মোড়ে একজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি গুলিবর্ষণ করছেন, এমন ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ নগরীর পাঁচলাইশ, দুই নম্বর গেট এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। নগরীর মুরাদপুর এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। ষোলশহরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অবস্থান রয়েছে।
অন্যদিকে সংঘর্ষ এড়াতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেন বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৬ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের শাটল ট্রেনে করে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগদান থেকে বিরত রাখতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ট্রেনের চাবি কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। এরপর ক্যাম্পাসে ও ষোলশহরে স্টেশনে দুই দফায় সংঘাতের পর থেকে শাটল ট্রেন বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে রাখেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী। এসময় তাদের ওপর বহিরাগতরা 'জয় বাংলা বলে হামলা করে। এতে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।