রিলায়েন্সের আম সাম্রাজ্য: মুকেশ আম্বানি যেভাবে অনুর্বর জমিকে এশিয়ার বৃহত্তম আম বাগানে রূপান্তরিত করলেন
পেট্রোলিয়াম ও টেলিযোগাযোগ ব্যবসার জন্য পরিচিত ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি কৃষিতেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলছেন। তার নেতৃত্বে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বিশ্বের বৃহত্তম আম রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে।
১৯৯৭ সালে গুজরাটের জামনগর শোধনাগারে দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ একটি দূরদর্শী প্রকল্প চালু করেছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের বিভিন্ন প্রবিধান মেনে চলার লক্ষ্যে এবং পরিবেশগত বিভিন্ন প্রভাব কমাতে প্রতিষ্ঠানটি আশেপাশের অনুর্বর জমিগুলোকে একটি বিশাল আমের বাগানে রূপান্তরিত করেছিল। এ উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং শিল্প কমপ্লেক্সের চারপাশে একটি টেকসই সবুজ অঞ্চল তৈরি করা।
রিলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ধিরুভাই আম্বানির নামানুসারে ৬০০ একর জায়গা জুড়ে থাকা বাগানটিতে ২০০ জাতের ১.৩ লাখের বেশি আম গাছ রয়েছে। ১৬ শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক লখিবাগ বাগানের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রিলায়েন্সের বাগানটির নাম রাখা হয়েছে 'ধীরুভাই আম্বানি লখিবাগ আম্রয়ে'।
গুজরাটের জামনগর অঞ্চলের উচ্চ লবণাক্ততা এবং শুষ্ক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে রিলায়েন্স বাগানটিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এতে একটি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট [পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া যাতে লবণাক্ত পানি থেকে খনিজ উপাদান আলাদা করে ফেলা হয়] রয়েছে যেটি পরিষ্কার পানি সরবরাহ করে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনে। বাগানটিতে পানি আহরণ কিংবা ড্রিপ সেচের মত বিভিন্ন উন্নত কৃষি কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত সার ব্যবহার করে ফলের সর্বোত্তম ফল, বৃদ্ধি এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়।
বাগানটিতে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের আমের সমাহার দেখা যায়। ফ্লোরিডার টমি অ্যাটকিনস ও কেন্ট এবং ইসরায়েলের লিলি, কেট ও মায়ার মতো বিদেশি জাতের আমের পাশাপাশি কেসার, আলফোনসো, রত্না, সিন্ধু, নীলম এবং আম্রপালির মতো বিখ্যাত ভারতীয় জাতের আমগাছ বাগানটিতে রয়েছে। বার্ষিক আনুমানিক ৬০০ টন প্রিমিয়াম আম উৎপাদন করে রিলায়েন্স এশিয়ার বৃহত্তম আম রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় প্রতিষ্ঠানটি আম সরবরাহ করছে।
রিলায়েন্স সক্রিয়ভাবে পরিবেশের স্থায়িত্ব এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সংস্থাটি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বার্ষিক এক লাখ চারা বিতরণ করে, উদ্ভাবনী কৃষি অনুশীলনের ওপর প্রশিক্ষণ দেয় এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিবেশগত দায়িত্ব পালন করে। এ উদ্যোগটি টেকসই উন্নয়নের নিয়ে রিলায়েন্সের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি কৃষি উদ্ভাবনকে চালনা করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকাও তুলে ধরে।
আম চাষে মুকেশ আম্বানির সাফল্য দেখিয়ে দেয় কীভাবে শিল্পপতিরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের সংস্থাগুলোকে কাজে লাগাতে পারে৷ ধীরুভাই আম্বানি লখিবাগ আম্রেই শুধু রিলায়েন্সের উদ্ভাবনী চেতনারই প্রতিফলন করে না বরং কৃষি রপ্তানিতে স্থায়িত্ব এবং বিশ্বনেতৃত্বের প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করে।