সেনাবাহিনীর জাতিসংঘের লোগোযুক্ত গাড়ির ব্যবহার কেন, জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংঘর্ষের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা কেন জাতিসংঘের লোগোযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করেছেন এবং আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে কেন প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে গোয়েন লুইস এ বিষয়ে জানতে চান। গোয়েন লুইসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাড়াহুড়ো করে ওই গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে বলে সমন্বয়ককে জানানো হয়েছে। 'গাড়িতে জাতিসংঘের লোগো যখনই সংশ্লিষ্টদের চোখে পড়েছে, তখনই সেটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই গাড়ি আর কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে।'
একইসঙ্গে কিশোরদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আন্দোলন ও হতাহতের ঘটনার তদন্ত কীভাবে করা হচ্ছে, কতদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে এসব বিষয়েও জাতিসংঘের বাংলাদেশ আবাসিক সমন্বয়ক জানতে চেয়েছেন বলে জানান আসাদুজ্জামান খান।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি জানতে চেয়েছেন যে, কিশোরদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাকে জানানো হয়েছে, যে কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি যাত্রাবাড়িতে পুলিশ হত্যায় জড়িত।
'ওই কিশোর পুলিশ হত্যার পরে তাকে ঝুলিয়ে রাখতে দড়ি টেনেছে এবং পরে ফোনে কাউকে জানিয়েছে যে পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। তাকে ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে সাবাশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এ কিশোরকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।'
তিনি বলেন, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ককে জানানো হয়েছে, হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে আরও জানানো হয়েছে পুলিশ জীবন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য হয়েছে। 'এ ঘটনায় শুধু ছাত্র নয়; পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক, ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন।
গোয়েন লুইসকে তদন্তের বিষয়েও অবগত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 'সরকার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানানো হয়েছে।'
জামায়ত ও ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ প্রক্রিয়াধীন
এ সময় জামায়ত ও ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির আগেই নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান এ দলকে রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে।
তিনি বলেন, '[অতীতে] আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দু-একটি মামলায় এ দলকে জঙ্গি দল হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করার মতামত দিয়েছে। গত সোমবার সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের মতামত নিয়েছেন। সেখানেও সকল দলের পক্ষ থেকে জামায়াত, শিবির নিষিদ্ধ করার মতামত এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন কখন জারি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বুধবার দুপুরেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দেশের বর্তমান অবস্থা তৈরিতে জামায়াত শিবিরের যোগসাজশ রয়েছে। ছাত্রদের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরেও আন্দোলন থামছে না।
'কার গুলিতে কে মরেছে, সরকার প্রকাশ করবে। এ ঘটনায় জামায়াত-শিবির জঙ্গি ভুমিকা নিয়েছে। বিএনপিও ছিল। জামায়াম ও শিবির নিষিদ্ধের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন, যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন হবে।