নিহত ছেলের হাত ধরে মা বলছেন, ‘আমার ছেলে মরেনি, এখনও বেঁচে আছে’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেসক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্ট্রেচারে পড়ে আছে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামের এক গুলিবিদ্ধ তরুণের দেহ। ছেলেটির হাতে ক্যানোলা পড়ানো।
তার মা রিতা ছেলের হাত ধরে বলছেন, 'আমার ছেলে মরেনি, এখনও বেঁচে আছে; চলো আমরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাই।'
রূপ বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় থাকতেন। তার বাবা রায়েরবাগের একজন ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক শিক্ষার্থী।
আজ সকালে রূপ তার মাকে বলেই বন্ধুদের সঙ্গে শাহবাগের গণজামায়েতে যোগ দিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, 'বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে যাবো, আবার একসঙ্গেই ফিরে আসবো।'
বিকাল ৩টার দিকে বাংলামোটর এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন রূপ। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রূপের মা রিতা ছেলের শরীরে হাত বোলাতে-বোলাতে বলছেন, 'ছেলেটা যখন সকালে এসেছে তাকে কেন ধরে রাখলাম না! ওর কিছুই হয়নি, ও এখনও জীবিত।'
তিনি আরও বলছেন, 'আমার বাবা আমাকে একা করে চলে গেছে। আমি কার মুখের দিকে তাকিয়ে বাকি জীবনটা বাঁচবো।'
একটু পরপর মৃত ছেলের বুকে মাথা রেখে গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানের গন্ধ নিচ্ছেন রিতা। আবার কিছুক্ষণ পরপর ছেলের পায়ের কাছে গিয়ে তার পায়ের তালুর ধুলো মুছে দিচ্ছেন।
রূপের সঙ্গে থাকা বন্ধু আশিক (ছদ্মনাম) তার মাকে বলছেন, 'আন্টি, ও আমাদের কাছেই ছিল, আমি দেখে রেখেছি। হঠাৎ আমার পাশ দিয়ে বিরাট একটা শব্দ হলো। পাশে চেয়ে দেখি রূপ রাস্তায় পড়ে আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আন্টি, আমরা সারাটা সময় একসাথেই ছিলাম। আমি কল্পানাও করতে পাড়িনি, কী থেকে কী হয়ে গেল।'
রূপের দাদি তার নিহত নাতির চুলগুলো টেনে বলছেন, 'রূপ কথা বল, ও কথা বলবে।'
অবশেষে তার মামা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রূপের লাশ এন্ট্রি করে তাদের হাজারীবাগ এলাকায় নিয়ে যান।