শঙ্কায় দোকান খোলেনি রাজধানীর ব্যবসায়ীরা, গণপরিবহনও চলছে সীমিত পরিসরে
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি রাজধানী ঢাকা। এদিন ঢাকার রাস্তায় পাবলিক ও প্রাইভেট পরিবহনের চলাচল থাকলেও, তা ছিল সীমিত। একইভাবে বিভিন্ন এলাকার কিছু খাবার দোকান ছাড়া, শপিংমল ও দোকানপাট ছিল বন্ধ।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঢাকা এখন পুলিশশুন্য। রাস্তাঘাটে কোথাও কোনো পুলিশের উপস্থিতি নেই। মাঝে মধ্যে কিছু জনতা ছোট ছোট গ্রুপ করে মহড়া দিচ্ছে। তাই অনেক ব্যবসায়ীই আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে।
রামপুরা থেকে শুরু করে মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার পর্যন্ত রাস্তার পাশের সব বিপনিবিতানগুলো বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
মৌচাক মার্কেট ব্যবসায়ীদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'দেশে যেহেতু একটা বড় পরিবর্তন হচ্ছে এবং এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য না থাকায় কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে, তাই আমরা মার্কেট খুলিনি।'
তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে ব্যবসায়ীরা আলোচনা করে বুধবার থেকে মার্কেট খুলবে।'
ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সোমবার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যায় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।এদিন সারাদেশে বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করে। এই অবস্থায় দেশের অন্যান্য অংশের মতো ঢাকা শহরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ মন্দির থেকে শুরু করে মগবাজার পর্যন্ত রাস্তাঘাটে ছাত্র প্রতিনিধিদের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। তবে রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় যানযট দেখা যায়নি।
এর মধ্যেও কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে বিজয় সরণী মোড়ে। দুপুরের পর থেকেই সেখানে কিছুটা যানজট দেখা গেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত শুক্রবার থেকেই দ্বিতীয় দফায় ছাত্র আন্দোলন চাঙ্গা হতে শুরু করলে, তারাও সেদিন থেকেই সীমিত পরিসরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করে। কারণ আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বাহিনী একত্র হয়ে ছাত্রদের উপর হামলা করে এবং ছাত্র আন্দোলনকারীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
রাস্তায় আন্দোলনের অবসান হলেও সাধারণ মানুষ সীমিত পরিসরে চলাফেরা করছেন।
অন্যদিকে, রাস্তায় নিরাপত্তা দেওয়ার মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নেই। এখন চলছে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। সব দিক বিবেচনা করেই দোকানপাট খোলেনি ব্যবসায়ীরা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকার নিউমার্কেট, বসুন্ধরাসহ ধানমন্ডির শপিং মলগুলো এমনিতেই বন্ধ ছিল। আগামীকাল বুধবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকার কাটাবনের নিলয় বার্ডস কর্নারের মালিক নূরে আলম লিটন বলেন, 'আইশৃঙ্খলা বাহিনির কোনো সদস্য না থাকায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গতকালের চেয়েও আজকে আমরা বেশি আতঙ্কে আছি। মাঝে মধ্যে ছোট ছোট দলে অনেকেই যাচ্ছে, এটা কিছুটা ভয়ের। তাই দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করছি।'
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে জাহানারা ম্যানশনে ফৌরদৌস নামের একটি পাঞ্জাবির দোকান খোলা পাওয়া গেল।
এর বিক্রেতা মো. জয় বলেন, 'এক সপ্তাহ পরে দোকান খুলেছি, কিন্তু কোনো বিক্রি নেই। আমরা ব্যপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'
তবে এই অবস্থার মধ্যেও গুলশানের কিছু কিছু দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে যাত্রাবাড়ি থেকে শনির আখড়া, রায়েরবাগ, চিটাগং রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হাইওয়ের পাশের সব দোকানপাটই বন্ধ দেখা গেছে। তবে মহল্লার ভেতরের কিছু মুদি, ঔষধ এবং কাচা সবজির দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়।
চিটাগং রোডের বাচ্চাদের পোশাক ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ জানান, তিনদিন পর আজ সকাল ১০টায় তিনি দোকান খুলেছেন। তবে বেলা দেড়টা পর্যন্ত তার কোনো বিক্রি হয়নি।
তার মতে, সবার মনে এখনও একটা ভয় কাজ করছে, তাই ব্যবসায়ীরাও দোকান খুলছে না, আবার সাধারণ মানুষও তেমন বাইরে আসছে না।
রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের পাশেই সাথী টেইলার্স, ছাত্র আন্দোলনের সময় সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
টেইলার্সের মালিক মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, দোকানটি রাস্তার পাশে হওয়াতে বেশি প্রভাব পড়েছে। গত ১৫ দিনে কোনো কাজের অর্ডার পাননি তিনি। তার দোকানটিতে পোশাক তৈরির কাজে নিয়োজিত ১৫ জন কর্মী রয়েছেন। তবে কাজ না থাকায় অনেককে ছুটিতে পাঠিয়েছেন তিনি।
শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ির বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ রয়েছে।
হাইওয়ে দিয়ে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও, এখানকার ব্যবসায়ীদের কোনো বেঁচাকেনা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।