মাছের মতো দেখতে রোবট ‘ইভ’, গভীর জল থেকে সংগ্রহ করতে পারে ডিএনএ
সমুদ্র থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) দূরে, সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা এমন অত্যাধুনিক রোবট নিয়ে কাজ করছেন যা পৃথিবীর মহাসাগর গবেষণার পদ্ধতি বদলে দিতে পারে।
অবিকল মাছের মতো দেখতে রোবটির নাম 'ইভ'। আসল মাছের মতোই সিলিকনের লেজ দোলাতে দোলাতে জুরিখের ঠান্ডা পানিতে মসৃণভাবে ভেসে বেড়ায়।
'সার্ফ-ইডিএনএ' নামের একটি শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন একটি দল এটির পরীক্ষা চালাচ্ছে। এই দলটি গত দুই বছর ধরে সফট রোবট মাছ তৈরি করে আসছে, যার মধ্যে 'ইভ' তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ডেনিস বাউম্যান সিএনএনকে বলেন, 'ইভকে মাছের মতো দেখতে তৈরি করার অন্যতম কারণ হলো যাতে এটি সহজে বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে মিশে যেতে পারে। এই বায়োমিমেটিক ডিজাইনের কারণে ইভের উপস্থিতি দেখে অন্যান্য মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণী বিচলিত হবে না'।
তবে মাছের ছদ্মবেশ ধারণ করারই ইভের একমাত্র বিশেষত্ব নয়। এই অটোমেটিক আন্ডারওয়াটার ভেহিকেলটি (এইউভি) একটি ক্যামেরা দিয়ে সজ্জিত, যা পানির নিচের দৃশ্য ধারণ করতে পারে। সমুদ্রের তলদেশের যেকোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা এড়াতে এতে একটি সোনার যন্ত্রও রয়েছে, যা একটি অ্যালগরিদমের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে।
এইউভিটিতে একটি বিশেষ ফিল্টারও রয়েছে যা পানির তলদেশ হতে 'ইডিএনএ' নামের সামুদ্রিক ডিএনএ সংগ্রহ করতে পারে।
ইভের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত ইডিএনএ পরবর্তীতে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় যাতে সেগুলোর সিকোয়েন্সিং করে জানা যায় যে সেই পানির মধ্যে কোন কোন প্রজাতি বাস করে।
ইটিএইচ জুরিখের পোস্টডক্টরাল গবেষক মার্টিনা লুথি সিএনএনকে বলেন, 'পরিবেশে যে সমস্ত প্রাণী রয়েছে, তারা সবাই তাদের ডিএনএ নমুনা ফেলে রেখে যায়, তাই আমাদের লক্ষ্য পানিতে ভাসছে এমন ডিএনএ যাতে আমরা খুঁজে পেতে পারি'।
শিক্ষার্থীরা আশা করছেন যে ইভ বিজ্ঞানীদের মহাসাগর এবং সেখানে থাকা প্রাণিদের আরও বিস্তারিত চিত্র প্রদান করতে সক্ষম হবে। আমাদের গ্রহের ৭০ শতাংশেরও বেশি এলাকা মহাসাগর দ্বারা আচ্ছাদিত হলেও, পৃষ্ঠের নিচে থাকা অনেক কিছু এখনও রহস্যময়।
এইউভি এবং দূরবর্তীভাবে পরিচালিত স্বয়ংক্রিয় ভেহিক্যালগুলো মহাসাগর অন্বেষণ করতে এবং পানির নিচের আবাসস্থল সম্পর্কে আরও জানার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক স্টার্ট-আপ অ্যাকুয়াই এমন ড্রোন তৈরি করেছে যা ক্লাউনফিশের মতো দেখতে এবং পানির অক্সিজেন, লবণাক্ততা এবং পিএইচ স্তরের মতো তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
এছাড়া, গত বছর, প্রথমবারের মতো একটি রোভার ৮ হাজার ৩০০ মিটার (২৭,৩৫০ ফুট) গভীরতায় সমুদ্রের অত্যন্ত গভীরে থাকা একটি মাছের ছবি ধারণ করেছে।
জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণের জন্য ইডিএনএ'র ব্যবহার বাড়ছে, কিন্তু এখনও অনেক বিজ্ঞানীরা পুরোনো পদ্ধতিতে— নৌকার পাশে ঝুঁকে থেকে কাপে করে জল তুলে নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন।
বাউম্যান আশা করেন, একদিন তাদের প্রযুক্তি আরও বড় পরিসরে ব্যবহার হবে, যে কেউ চাইলে তা ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন,' আমরা জীববিজ্ঞানীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সরঞ্জাম তৈরি করতে চাই। হয়ত আমরা একদিন বিপন্ন হওয়া বা বিলুপ্ত হওয়া প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করতে পারব'।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন