দেশের সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, জেলা-উপজেলা পরিষদে প্রশাসক বসানো শুরু
চট্টগ্রামের হাটহাজারি পৌরসভায় হাটহাজারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম মশিউজ্জামানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আজ রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ শুরু হলো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা।
এর আগে গতকাল শনিবার (১৭ আগস্ট) সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ এবং প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে 'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এবং উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ সংশোধন করে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সংশোধনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি আইনে দুটি করে নতুন ধারা যোগ করা হয়।
একটি ধারায় সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে এসব সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করতে পারবে। অন্য ধারায় এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক ব্রিফিংয়ে জানায়, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করা, প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও জরুরি কারণে সময়ের প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে এসব অধ্যাদেশ সংশোধন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করেও কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এরকম পরিস্থিতিতে গত ১৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কোথায় আছেন জানতে চাওয়া হয়।
একইদিনে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক আদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ অন্যান্য নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে আসছিলেন না।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এসব ব্যক্তিও দেশে বা বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। কারণ এদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি।
স্থানীয় সরকারে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকে স্থানীয় সরকারের সকল সংস্থা চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বেশিরভাগ পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৪ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি আত্মগোপনে রয়েছেন। ৪৯৫ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে তিন শতাধিক চেয়ারম্যানকে খুঁজে পাচ্ছে না স্থানীয় সরকার বিভাগ।
কাছাকাছি সংখ্যক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও কর্মস্থলে আসছেন না। ৩৩০ পৌরসভার মধ্যে ২০০টিরও বেশি পৌরসভার মেয়রও ৫ আগস্টের পরে কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। কয়েকশ কাউন্সিলরও অনুপস্থিত রয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যান্য দল থেকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সরকারে নির্বাচন করে যারা জিতেছিলেন তারা অফিস করছেন।
দেশে ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৯টি সিটি করপোরেশনের মেয়রের খোঁজ পাচ্ছে না স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, গাজীপুরের মেয়র জায়েদা খাতুন ও রংপুরের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান অফিস করছেন।