বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যার কারণ কী?
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বাংলাদেশের আটটি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-এর সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশে চলমান বন্যার জন্য তিনটি প্রাথমিক কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো:
প্রথমত, মৌসুমী লঘুচাপটি বাংলাদেশের উপর স্থায়ী হয়ে আছে। বুধবার বিকালেও এ লঘুচাপটি চট্টগ্রামের অংশে অবস্থান করছিল যা পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছিল না। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে খুবই স্ট্রংলি ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন (এমজেও) অবস্থান করছে। এর ফলে সাগরে নিয়মিত গরম ও আর্দ্র বাতাস তৈরি হচ্ছে, যা উপকূলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
তৃতীয়ত, মধ্য এশিয়ার উপরে 'জেট স্ট্রিম' এর অবস্থান রয়েছে। এর ফলে ভারতসহ বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
চতুর্থত, বন্যার পিছনে ভারত বাঁধ খুলে দেওয়া অন্যতম কারণ। ভারী বর্ষণে নদীগুলোর পানি বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় ভারত বন্যার কবেলে পড়েছে। প্রতি বছর ভারত বন্যার আক্রান্ত হলেই তারা বাঁধ খুলে দেয়। এ বছরও তারা কোথাও কোথাও বাঁধ খুলে দিয়েছে এবং কিছু জায়গায় অতিরিক্ত পানির কারণে বাঁধের গেটগুলো ভেঙে গেছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ ব্যাখ্যা করেছেন, এ তিনটি কারণ একই সাথে ঘটলে তখন ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং এর ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ দেশে ২০১৭ সালের জুন মাসে এই তিনটি কারণ একই সাথে ঘটেছিল এবং এর কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম। যার ফলে সেই বছর চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পলাশ সতর্ক করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০০-৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আগামী শুক্রবার থেকে এই বৃষ্টি কামার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ সাম্প্রতিক বন্যার জন্য দু'দিন আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ ঘণীভূত হওয়াকে দায়ী করেছেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুই দিন আগে সুস্পষ্ট লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। লঘুচাপের ডান দিকে অর্থাৎ, সিলেট ও চট্টগ্রামে অস্বাভাবিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, অন্যদিকে উষ্ণ, মৌসুমি বায়ুর কারণে অন্যান্য এলাকায় বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এমনটা সাধারণত ঘটে না।'
এদিকে, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আরও খারাপ বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তারা দেশের আরও জেলা বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।