দেশের সর্ববৃহৎ সোলার প্রকল্পের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি বেক্সিমকোর
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র তিস্তা সোলার লিমিটেডের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টার জরুরি সহায়তা চেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ।
জনতার আক্রমণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে সুকুক বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন গ্রুপটি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর, গতমাসেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। পরে তাকে ছাত্র আন্দোলনের সময়ের একাধিক হত্যা মামলায় কয়েকবার রিমান্ড নেওয়া হয়।
এদিকে, গত ৭ সেপ্টেম্বর একদল লোক ২০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সমবেত হয়ে আক্রমণের চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা সহায়তা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স-এর পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে সোলার পার্কটিকে রক্ষা করতে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দপ্তর বা বিভাগগুলোকে অনুরোধ করছি।'
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'আমরা একা এ ধরনের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নই।'
চিঠিতে জানানো হয়, একদল লোক জড়ো হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ২০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রেটিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে।
'আমরা তথ্য পেয়েছি, ৭ সেপ্টেম্বর বা এর কাছাকাছি সময়ে, একদল লোক তিস্তা সোলার লিমিটেডের গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের লাটশালে ২০০ মেগাওয়াট সোলার পার্কে জড়ো হয়ে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করতে পারে,' উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
এর আগে, শনিবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তাপাড়ে লং মার্চ ও মানববন্ধন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নদীপাড়ের মানুষজন। একই সঙ্গে তিস্তার চরে গড়ে ওঠা বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, নিরীহ কৃষকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জমি কেড়ে নিয়ে এবং নদী মেরে ফেলে পাওয়ার প্রকল্প নির্মাণের নামে দখলের মহোৎসব চালিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। সেই জমিতে গড়ে ওঠা বেক্সিমকো সোলার পাওয়া প্ল্যান্ট প্রকল্প নির্মাণেও হয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি।
সোলার পার্কটি ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করার পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুকের সুকুক বন্ড হোল্ডারদের অর্ধ-বার্ষিক হারে অর্থপ্রদান করছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন যদি এ ধরনের জমায়েত এবং আক্রমণের ফলে সোলার পার্কটির কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে পার্কের সক্ষমতা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের দক্ষতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে; সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পার্কটি।
'সুতরাং, এ ধরনের পরিস্থিতিতে— যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে— বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপিডিবিতে সরবরাহ বন্ধ হওয়াসহ, ভবিষ্যতে সুকুক হোল্ডারদের অর্ধ-বার্ষিক হারে অর্থপ্রদানও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি এমন হলে, প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধেও বাধা সৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে, বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুকের ট্রাস্ট ডিডের বিভিন্ন নিয়ম-নীতি ও কমপ্লায়েন্স এবং অন্যান্য চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতার জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হওয়ার পাশপাশি ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে,'— বলা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রোববার ওসমান কায়সার চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও, তিনি রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অনাবাদি চরের ৬৫০ একর জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড। এতে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩,০০০ কোটি টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপ গ্রিন-সুকুক বন্ড থেকে মোট ৩,০০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ১,৮০০ কোটি টাকা এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে সরকার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অনুমোদন দেয়। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ০.১৫ সেন্ট দরে ২০ বছর ধরে কেনার চুক্তি করেছে বিপিডিবি, যা এখন পর্যন্ত অনুমোদিত যেকোনো সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের দরের চেয়ে বেশি।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।