মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারলেই রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব: বক্তারা
জনপ্রত্যাশার 'নতুন বাংলাদেশ' বিনির্মাণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্ভাসিত রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য। একইসঙ্গে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারলেই 'রাষ্ট্রসংস্কার' সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তরুণেরা।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত 'নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন বক্তারা।
নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসনকাঠামো ও বিচারব্যবস্থার আমূল সংস্কার; গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারলেই 'রাষ্ট্রসংস্কার' সম্ভব হবে মন্তব্য করেছেন তারা। একইসঙ্গে, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের স্বার্থে একটি নতুন রাজনৈতিক-কাঠামো প্রয়োজন কি-না, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত আসতে হবে এদেশের আপামর জনসাধারণের মধ্য থেকে বলে মন্তব্য করেন আলোচকবৃন্দ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও আরিফ সোহেল, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপস্থাপক ও গণমাধ্যমকর্মী ফারাবি হাফিজ, তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, , গণমাধ্যমকর্মী ও রম্যলেখক শিমু নাসের। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত ইয়ুথ এনগেইজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন মাধ্যমে কর্মরত তরুণ পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর থেকে চলমান দলবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সাম্প্রদায়িক, অসহিষ্ণু ও বহুত্ব পরিপন্থি অগণতান্ত্রিক শক্তির উদ্বেগজনক তৎপরতার উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন "নতুন বাংলাদেশর অভিষ্ট অর্জন করতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য। আন্দোলনের মূলধারা থেকে এর নেতৃত্ব বিকশিত হবে, যার প্রতি আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী এ দেশের সকল ছাত্র জনতার সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন থাকবে বলে মনে করি।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "যারাই ক্ষমতায় যান, তাদেরকে জনগণ বিশ্বাস করতে চান না, কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা তাদের ভালো নয়। আমাদেরকেও তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। এক্ষেত্রে জনগণের দোষ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাও এমনি করবে কি-না সেটিকেও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে প্রশ্ন করার এক ধরনের বিনিময় মূল্য ছিলো। কিন্তু আমাদেরকে প্রশ্ন করায় কোনো বিনিময় মূল্য নেই।"
তিনি বলেন, "আমাদেরকে প্রশ্ন করবেন, এর মধ্য দিয়ে সংশোধন হবো, সংস্কার ত্বরান্বিত হবে। আমাদের পক্ষের মতামতের তুলনায় যারা আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দ্বিগুণ জরুরি। আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, "সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই আন্দোলন। ১৯৪৭ বা ১৯৭১ এ আমাদের পতাকা পরিবর্তিত হয়েছে, স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। কারণ এর পরবর্তী সকল শাসকের মধ্যেই স্বৈরশাসনের উপাদান ছিল। এ দেশের জনগণ যারা সবসময় শাসকদের মিথ্যা ভাষ্যের বিপক্ষে লড়াই করেছে, তাদের ভাষাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।"
"আমরা মনে করি, ২০২৪ এর আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হয়েছে, যা ২০১৮ তে সম্ভব হয়নি। জনগণের ভাষায় আমরা কথা বলতে পেরেছি বলেই স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিতে পেরেছি," যোগ করেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, "নতুন বাংলাদেশ তরুণদের মধ্যে অনেক আশা-আকাঙক্ষার জন্ম দিয়েছে। এই নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে গণ-আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সবসময় বলা হয়েছে জনগণ ক্ষমতার উৎস, কিন্তু বাস্তবে সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে বাংলাদেশের সকল জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজনে গ্রামীণ পর্যায়ে, গ্রামীণ আবহে ও অঞ্চলে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।"