রুশ গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কায় সরকারি ডিভাইসে 'টেলিগ্রাম' ব্যবহার নিষিদ্ধ করল ইউক্রেন
রাশিয়ার গোয়েন্দা নজরদারির আশঙ্কায় সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক কর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের ব্যবহৃত সরকারি ডিভাইসগুলোতে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে ইউক্রেন। শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিল এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিইউআরের প্রধান কিরিলো বুদানভ টেলিগ্রামে রাশিয়ার বিশেষ বাহিনীর গোয়েন্দাগিরির প্রমাণ উপস্থাপনের পর জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিল এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তবে নিরাপত্তা কাউন্সিলের অপতথ্য মোকাবিলা কেন্দ্রের প্রধান আন্দ্রেই কোভালেঙ্কো জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু সরকারি ডিভাইসগুলোর জন্য, ব্যক্তিগত ডিভাইসে টেলিগ্রাম ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।
টেলিগ্রাম অ্যাপটি ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয় দেশেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের পর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎসে পরিণত হয়। তবে যুদ্ধের সময় এ প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা নিয়ে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
রুশ বংশোদ্ভূত পাভেল দুরোভ এই মেসেজিং অ্যাপটি প্রতিষ্ঠা করেন, যিনি ২০১৪ সালে রাশিয়া ছেড়ে দুবাইতে বসবাস শুরু করেন। সম্প্রতি তাকে ফ্রান্সে গ্রেফতার করা হয়েছে, যেখানে তার বিরুদ্ধে টেলিগ্রামের মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যকলাপের অভিযোগের তদন্ত চলছে।
নিরাপত্তা কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুদানভ প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী টেলিগ্রামের মেসেজ, এমনকি মুছে ফেলা বার্তাগুলোকেও অ্যাক্সেস করতে সক্ষম, পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করতে পারে।
বুদানভ বলেন, "আমি সবসময় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছি এবং করে যাচ্ছি, কিন্তু টেলিগ্রামের ক্ষেত্রে এটি মত প্রকাশের বিষয় নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।"
অন্যদিকে, টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ বলেছে যে তারা কোনো দেশের কাছে ব্যবহারকারীদের তথ্য সরবরাহ করেনি এবং মুছে ফেলা বার্তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে ফাঁস হওয়া মেসেজগুলো সাধারণত ডিভাইসের দুর্বলতা, যেমন জব্দ হওয়া বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের কারণে ঘটে।
টেলিমেট্রিও ডাটাবেজ অনুযায়ী, ইউক্রেনে প্রায় ৩৩ হাজার টেলিগ্রাম চ্যানেল সক্রিয় রয়েছে। দেশটির ৭৫ শতাংশ নাগরিক যোগাযোগের জন্য টেলিগ্রাম ব্যবহার করেন এবং ৭২ শতাংশ একে তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন