বাংলাদেশের সংস্কার, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা চান জয়
আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে বাংলাদেশের প্রকৃত সংস্কার ও নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নির্বাচনের বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যেও খুশি তিনি।
গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, দেড় বছরের মধ্যে সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেবে।
সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের পর সজীব ওয়াজেদ জয় গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেন, 'আমাদের অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত টাইমলাইন আছে শুনে আমি খুশি।'
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'এর আগেও আমরা সংস্কারের নাটক দেখেছি, যেখানে অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক কোনো সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি কেবল আরও খারাপই হয়েছে।'
এ সময় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সংঘটিত অভ্যুত্থানগুলোর কথা তুলে ধরেন জয়। তিনি ২০০৭ সালে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আসা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাও উল্লেখ করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত দুই বছর ক্ষমতায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তারা বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। এ অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানায়। তবে এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন আয়োজনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের কথা জানান।
এ লক্ষ্যে ছয়টি কমিশনও গঠন করে সরকার। কমিশনগুলো অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবে। আর কাজ শেষে তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করছে সরকার। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে সে সম্পর্কে আইএমএফ প্রধানের কাছে তুলে ধরেন অধ্যাপক ইউনূস।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা যায়, কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমতে পৌঁছানো গেলে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে বৈধ সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব।
এ বিষয়ে অন্তবর্তী সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।