পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতি ১৪,৪২১ কোটি টাকা: সিপিডি
দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় আনুমানিক ১৪ হাজার ৪২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাত। বন্যায় চলমান আমন-সহ অন্যান্য ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি।
রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর সিপিডি কার্যালয়ে 'পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া: সিপিডির বিশ্লেষণ' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে এ তথ্য জানিয়েছে সিপিডি।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, "দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের এক দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের খসড়া জিডিপির শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অনুমিত জিডিপির শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ।"
বন্যা ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, "সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে ২৯ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ, কুমিল্লায় ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, ফেনীতে ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।"
"কৃষি ও বন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই খাতে ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ১৬৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এটি মোট ক্ষতির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ", যোগ করেন তিনি।
কৃষিতে মোট কী পরিমাণ ফসলের উৎপাদন নষ্ট হতে পারে সেটি গবেষণায় না উঠে আসলেও সিপিডি বলছে, এটি খাদ্য নিপারত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। যে কারণে সরকারের দ্রুত পরিকল্পনা করে চাল আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া এবং এগ্রিকালচারাল ইনপুট ও কমোডিটি আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সিপিডির রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, বন্যায় ফসলের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই পর্যাপ্ত বীজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আগামী মৌসুমে আমন চাষ ব্যাহত না হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কিছু কিছু এলাকায় কৃষকদের চাষ করা মাছের ৮৫-৯৫% বন্যায় ভেসে গেছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পানির প্রবাহে চলতি বছরের ১৯ আগস্ট দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরু হয়। এতে দেশের ১১ জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিপিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, বন্যায় জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালিতে। যেখানে ৪১৯১.৬২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরপর কুমিল্লায় ৩৩৯০.৩৫ কোটি টাকা, ফেনীতে ২৬৮৩.১৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রামে ১৬৭৬.৯৪ কোটি টাকা, লক্ষীপুরে ১৪০৩.৯১ কোটি টাকা, মৌলভীবাজারে ৫০৬.০৭ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪.০১ কোটি টাকা, হবিগঞ্জে ১৪৩.৫৯ কোটি টাকা, খাগড়াছরিতে ১২৭.২৩ কোটি, কক্সবাজারে ১০০.৪৮ কোটি টাকা এবং সিলেটে ২০.৫১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিপিডি আরও বলছে, বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণেও অসামঞ্জসতা লক্ষ্য করা গেছে। কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ একাধিকবার ত্রাণ পেলেও কোথাও কোথাও ত্রাণ একেবারেই পৌঁছায়নি। এ বিষয়টিকে সমন্বয়হীনতা ও সক্ষমতার ঘাটতি হিসেবে উল্রলেখ করেছে সংস্থাটি।