দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় সর্বোত্তম পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ নাগরিক সমাজের
যেকোনো দুর্যোগে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি সবসময়ই অবহেলিত থাকে। অথচ নারীরাও শারীরিক, মানসিক এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। ন্যূনতম সচেতনতা এবং জরুরি সেবা-সহায়তার অভাবে তারা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
এ কারণে, দুর্যোগে যেকোনো ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনার সময় নারীর সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত বলে তাগিদ দিয়েছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা।
আগামীকাল (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি আজ সোমবার একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দুর্যোগে নারীর শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি ঘটে, কিন্তু তা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। তারা বলেন, সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নারীবান্ধব ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
জাতীয় কমিটির সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি কর্মকর্তা খাদিজাতুল কুবরা।
তিনি বলেন, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। অনেক নারী গবাদিপশু ও সম্পদ রক্ষার জন্য রাত কাটিয়েছেন ছাদে বা নৌকায়, এবং শিশুরা অসুস্থ হয়েছে ভেজা কাপড়ে থাকার কারণে।
নারীদের মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। পরিষ্কার পানি ও স্যানিটারি প্যাডের অভাবে তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটিয়েছেন। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল থাকায় গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব ছিল, যা তাদের মানসিক চাপ ও নিরাপত্তা হ্রাস করেছে।
কমিটির সদস্য মথুরা ত্রিপুরা বলেন, এবারের বন্যায় পূর্বাঞ্চলে ভয়, সম্পদহানির কারণে নারীদের গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে। তিনি গর্ভবতী নারীদের জন্য জরুরি সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
আরেক সদস্য ফিরোজা বেগম বলেন, বেসরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও নারীদের জন্য সমন্বিতভাবে দুর্যোগ-পরবর্তী সরকারি বা বেসরকারি সেবা লক্ষ্য করা যায় না।
সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সাইক্লোন সেন্টারে উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় নারীরা মানসিক চাপে দিন কাটান। এজন্য দুর্যোগের সময় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
দুর্যোগের সময় নারী ও কিশোরীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য সেবা ও পণ্য (স্যানিটারি ন্যাপকিন) বিতরণ ও ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করার আহ্বান জানান সদস্য। আইনুন নাহার।
ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় কমিউনিটি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে র্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা ও গ্রামীণ নারীদের সম্মাননা প্রদান।