কারাগারগুলো ব্যাপকভাবে সংস্কারের দাবি মানবাধিকার কর্মীদের
কারাবন্দীদের মানবিক জীবনযাপন নিশ্চিতে দেশের কারাগারগুলো ব্যাপকভাবে সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
আজ শনিবার রাজধানীর বকশিবাজার কারা কনভেনশন হলে আয়োজিত 'কারাগার সংস্কার: বাস্তবতা ও করণীয়' শীর্ষক কর্মশালায় তারা এ কথা বলেন। এজন্য সরকারের কাছে বিদ্যমান জেল কোড ও দণ্ডবিধি যুগোপযোগী করার দাবিও জানান তারা।
কর্মশালায় আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা ব্রিটিশ আমলে প্রণীত কারাবিধি বাতিল করে নতুন কারাবিধি প্রণয়নের তাগিদ দেন। আইন, আদালত, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) ও কারা অধিদপ্তর যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, 'কারগার মূলত সংশোধানাগার। কারাগারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধীর সংশোধন। বর্তমানের কারাগার ব্যবস্থা সংশোধনমূলক তত্ত্বনির্ভর। জেলগুলো মূলত ১৮৬০ সালের জেল কোড, দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ও দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট আইনসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব আইন ঔপনিবেশিক আমলে আনা। এসব আইন সংশোধন করে জেলব্যবস্থা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।'
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে তিনটি কেন্দ্রীয় কারাগার, ১৩টি জেলা কারাগার, ৪৩টি উপ-কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ জেল এর যাত্রা হয়৷ ১৯৯৭ সালে উপ-কারাগারগুলো জেলা কারাগারে পরিণত করা হয়। বর্তমানে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ৫৫টি জেলা কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ জেলব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় জেল কোডে নেই। আবার বিদ্যমান আইনে রয়েছে এমন অনেক সুবিধা কার্যকর ও প্রয়োগ হচ্ছে না। এর সমাধান জরুরি।'
তিনি কারাগার ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে এবং কারাগারে নির্জন স্থানে রাখা আইনের লঙ্ঘন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, 'কারাগার, আদালত সর্বোপরি সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন করতে একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে। আলাদাভাবে সম্ভব না। আদালতগুলোতে যেন নির্যাতিত মানুষের সংখ্যা কমে আসে। বিচারগুলো যেন হয়।'
কর্মশালায় হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, 'বাংলাদেশের জেল কোড ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ পুনমুদ্রিত হয়েছিল। বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে কারা সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। একজন কারাবন্দীর শুধু ফ্রিডম অব মুভমেন্ট থাকবে না।'
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, 'কারা আইন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। মানবিকভাবে কারাগারগুলো গড়ে তুলতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও প্রয়োজন।'
কর্মশালায় কারা-মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন কারা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।