মিরপুরে সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ: সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জ, আটক এক
সাকিব আল হাসানের ঘরের মাটিতে খেলার খবরে শুরু হয় বিক্ষোভ। কদিন আগে মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয়ে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানায় মিরপুরের ছাত্রজনতা নামের একদল আন্দোলনকারী। এদিনই সাকিবের না আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে যায়। পরের দিন তাকে খেলানোর দাবিতে একই জায়গায় আন্দোলন করে সাকিবভক্তরা। ঘোষণা দেন লং মার্চের।
আজ তারা মিরপুর স্টেডিয়ামের এসেছিলেন, কিন্তু এদিন মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয় সাকিবকে খেলানোর বিপক্ষে বিক্ষোভ করা আন্দোলনকারীরাও। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে। মিছিল, স্লোগান চলে দুই পক্ষেরই। এক পর্যায়ে তা মারামারিতে পরিণত হয়। সাকিব ভক্তরা হামলার শিকার হন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করেন তারা। এ সময় কয়েকজনের গায়ে আঘাত লাগে। দুই পক্ষের বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভের মাঝে একজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। সানি মিয়া নামের এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সরকার বিরোধী স্লোগান দেওয়ায় তাকে আটক করা হয় বলে জানানো হয়। সানির দাবি, সাকিবকে খেলানোর পক্ষে আন্দোলন করতে এসেছিলেন তিনি। এই সাকিবভক্ত বলেন, 'আমি কেবল চেয়েছি সাকিব শেষ ম্যাচটি খেলুক। কিন্তু সাকিব বিরোধীরা আমাকে ধাওয়া দেয়। আমি দৌঁড়ে পালাতে চেষ্টা করি। তখন আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে। আমি কোনো অন্যায় করিনি। বাংলাদেশকে যে ক্রিকেটার সম্মান এনে দিয়েছে, তার সম্মানজনক বিদায় দেখতে চাওয়া তো অপরাধ নয়।'
ঘোষণা দিয়েই লং মার্চে আসেন সাকিবভক্তরা। এদিন পাল্টা বিক্ষোভের কথা জানিয়েছিল সাকিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরাও। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুতি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মিরপুর ২ নম্বর থেকে প্রশিকা মোড় পর্যন্ত রাস্তা আটকে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পাঁচ প্লাটুন সেনাবাহিনী সদস্যের পাশাপাশি উল্লেখসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার কাজে ছিলেন।
কিন্তু এর মাঝেই আস্তে আস্তে জড়ো হতে শুরু করে সাকিবভক্তরা। বেলা দুইটার দিকে মিরপুর স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের দাবির কথা জানায় তারা। সাকিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরাও জায়গাটিতে ভীড়তে থাকে। এক সময়ে গিয়ে সাকিব ভক্তদের ওপর হামলা করে তারা। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা।
হামলার শিকার হয়ে দুই নম্বর গেটে দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে সাকিবভক্তরা। এ সময় তাদের ফেরাতে লাঠি হাতে বাধা দেন সেনাবাহিনীরসদস্যরা। মাহফুজা নামের এক সাকিবভক্ত অভিযোগ করেন বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। আমাদের দাবি জানাচ্ছিলাম। অথচ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতিতে হুট করে কয়েকজন এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা হামলাকারীদের প্রতিহত না করে উল্টো আমাদেরকেও ধাওয়া দিয়েছেন।'
সাকিবকে খেলানোর বিপক্ষে থাকা আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়েছেন। সাকিবভক্তদের কেউ কেউ যখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন, সেখানে গিয়ে স্লোগান দেন তারা। এক আন্দোলনকারী বলেন, 'সাকিবের মতো ক্রিকেটার আমাদের দরকার নেই। দেশে যখন মানুষ মারা যাচ্ছিলো, সাকিব তখন ঘুরে বেড়িয়ে আমাদের সাথে মজা নিচ্ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের আবেগ নিয়ে সে খেলা করেছে। তাকে আর জাতীয় দলের জার্সিতে আমরা দেখতে চাই না।'
দীর্ঘ সময় ধরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। বাইরে যখন এমন অবস্থা, মিরপুর স্টেডিয়ামের ভেতরে তখন অনুশীলন করছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। পৌনে চারটার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন হোটেলের উদ্দেশ্যে স্টেডিয়াম ছাড়ে, তখনও মিরপুর স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটে সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভারত সফরে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে খেলবেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। নিরাপত্তাজনিত কারণে শুরুতে তার দেশের মাটিতে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও তা কেটে যায়। সাকিবকে নিয়েই প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করে বিসিবি। বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়ার খবরে বাড়ে উত্তেজনা।
মিরপুর স্টেডিয়ামের দেয়ালে বিরুদ্ধ বার্তা লেখাসহ তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিসিবিতে স্মারকলিপি জমা দেয় আন্দোলনকারীরা। পরের দিন থেক আন্দোলন শুরু করে সাকিবভক্তরাও। এমন উত্তপ্ত অবস্থায় মাঝেই ২১ অক্টোবর মিরপুর স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।