পলিথিন-ব্যাগমুক্ত বাজারকে পুরস্কার দেওয়া হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
আগামী ১ নভেম্বর থেকে দেশের সমস্ত বাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। একইসাথে, রাজধানীর যেসব বাজার সম্পূর্ণ পলিথিন-মুক্তভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে, সেসব বাজারকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার (২০ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দোকান মালিকদের বলেন, "ঢাকার যে বাজারগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিন শপিং ব্যাগ নির্মূল করতে পারবে, তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হবে।"
ব্যবসায়ীদের প্রতি উপদেষ্টা পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগের মতো পরিবেশ-বান্ধব বিকল্পগুলো গ্রহণ ও প্রচারের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে, পরিবেশ-বান্ধব বিকল্পগুলোর প্রচারণা বাড়াতে এতে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "পলিথিন পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য, উভয়ের জন্যই একটি গুরুতর হুমকির কারণ। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়িকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে।"
রিজওয়ানা বলেন, "পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন এবং সংরক্ষণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প, যেমন— পাট বা চটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।"
"আমরা এখন পর্যন্ত অভিযানে নামিনি। তবে সুপার শপগুলো থেকে আমরা পজেটিভ ফিডব্যাক পেয়েছি। ক্রেতারাই এখন আর পলিথিন ব্যাগ নিতে চান না," বলেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, "আমরা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকা করেছি, কিন্তু সেগুলো এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি। শুধু পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ আছে; সেটিকে আমরা বাস্তবায়ন করছি।"
তিনি বলেন, "নভেম্বরে আমরা শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব দেব মার্কেটগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। ডিসেম্বর থেকে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। এটা আইন, আমাদের মানতেই হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের একটু সুযোগ দিলাম। সুপার শপিংমলে আমরা ১ নভেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করবো আগের ঘোষণা অনুযায়ী।"
একইসঙ্গে, যেখানে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন করা হয়, সেখানেও ১ নভেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি আর বলেন, "দোকানীরা পাটের ব্যাগের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যতোই এটাতে তারা যতই যুক্তি নিয়ে আসুক না কেন, আমরা পলিথিনের বিকল্প পাট, চট, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করবো। আমরা বায়োপ্লাস্টিক সার্টিফাইড করতে পারি কিনা, সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। তবে সেটা সীমিত পরিসরে ব্যবহার হতে পারে কিনা, সেটা নিয়েও ভাবা যেতে পারে। এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।"
বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, "কোনো কিছুর জন্য মার্কেট কখনও খালি থাকে না। আমরা দেশীয় পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে পারি। যখন বাল্কে সাপ্লাই আসবে, তখন পাটের ব্যাগের দামও কমে আসবে।"
অনুষ্ঠানে দোকান মালিক সমিতির নেতারা সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানান এবং বিভিন্ন সুপারিশও দেন।
উত্তরা রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সভাপতি হেলাল তালুকদার বলেন, "এখনই মার্কেটগুলোতে হার্ড লাইনে না গিয়ে, যেখানে পলিথিন উৎপাদন হয় সেখানে বন্ধ করুন। আমরা ধীরে ধীরে পলিথিন থেকে ফিরে আসবো। একইসঙ্গে, বিকল্প ব্যাগ সহজলভ্য করতে হবে।"
রমনা ভবন মার্কেটের সহ-সভাপতি ড. কিশোর বলেন, "আমরা শাস্তিতে উদ্যোগী হচ্ছি, কিন্তু প্রণোদনায় গুরুত্ব দিচ্ছি না। ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে ইনসেন্টিভ বা প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।"