বাংলাদেশে একজন বামন-মানুষ হওয়ার যত বিড়ম্বনা!
মো. ইমাদ চৌধুরী একটি সাদা ঝকঝকে শার্ট, কালো প্যান্ট এবং চকচকে চামড়ার স্যান্ডেল পরেছিলেন। তার পরিপাটি দাড়ি তার পরিপাটি পোশাকের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল। তিনি যখন এক্সিট গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন, তখন কেউ একজন দ্রুত উঠে তার জন্য স্বাভাবিক কাচের দরজা খুলে দিলেন। এ বিষয়টি প্রায়ই ঘটে।
৩৪ বছর বয়সি ইমাদ একজন সাংবাদিক। তিনি ডোয়ার্ফিজম বা বামনত্ব নিয়ে জীবনযাপন করছেন। তিনি উচ্চতায় মাত্র ৩.৫ ফুট। মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের 'সাহায্য' পাওয়ার বিষয়ে তিনি অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এ উচ্চতা নিয়েই ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে গণপরিবহন এবং রিকশায় চলাচল করেন তিনি। পথচারী, রিকশাচালক এবং বাস কন্ডাক্টররা কৌতূহলী দৃষ্টিতে ইমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু এসব নিয়ে তিনি বেশ ভালোভাবেই জীবনযাপন করছেন বলে জানালেন।
'এমন অনেক দিন গেছে, যখন আমি পাবলিক বাসে উঠেছি আর মানুষ সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসার জন্য বলতো। পুরোটা সময় তারা আমার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। আমি বুঝি, আমাকে দেখে হয়তো তারা উদ্বিগ্ন। কিন্তু এ দৃষ্টিগুলো আমার মনে রয়ে যেত,' হাসতে হাসতেই এসব কথা বলেন ইমাদ।
এমন অভিজ্ঞতাকে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তিনি ছোটবেলা থেকেই নিজের মধ্যে গড়ে তুলেছেন। তিনি আরও বলেন, 'কখনো কখনো রিকশাচালকরা আমার কাছ থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া চাইতেন। তারা আমাকে বোকা মনে করতেন কিংবা ভাবতেন, আমাকে সহজেই ঠকানো যাবে।'
ইমাদ উচ্চতার কারণে সহজেই অনেকের কাছে না চাইতেই সহায়তা পান। কিন্তু শারীরিক এ অবস্থা সম্পর্কে অনেকেই খুব কম জানেন। শারীরিক এ গঠনকে 'একন্ড্রোপ্লাসিয়া' (হাড়ের বৃদ্ধি সংক্রান্ত জটিলতা, যা জিনগত মিউটেশনের কারণে ঘটে) বলা হয়। এটি স্বাধীন জীবনযাপনে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। এটি খর্বাকৃতির সবচেয়ে সাধারণ রূপ, যার কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন—বড় মাথা, উঁচু কপাল এবং ছোট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
কিন্তু ইমাদের উজ্জ্বল চাহনি কিংবা তার সংক্রামক হাসি এসব চিকিৎসাশাস্ত্র সংক্রান্ত জটিল ভাষাকে ম্লান করে দেয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রবি বিশ্বাস বলেন, 'শারীরিক এ গঠনকে আমরা চিকিৎসার ভাষায় 'খর্বাকৃতি' বলে থাকি। এটি যদি জিনগত হয়ে থাকে, তাহলে এর কোনো নিরাময় নেই, কারণ এটি কোনো রোগ নয় বরং একটি কন্ডিশন।'
অক্টোবর মাস আন্তর্জাতিক ডোয়ার্ফিজম সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয় এবং ২৫ অক্টোবর ডোয়ার্ফিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। ইমাদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে এবং তার দৃষ্টিকোণ থেকে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলাদেশে ডোয়ার্ফিজম নিয়ে জীবনযাপনের বাস্তবতা এবং কীভাবে পরিবারের সহায়তা একজন খর্বাকৃতির ব্যক্তিকে মূলধারায় নিয়ে আসে, তা তুলে ধরেছে।
ইমাদের অবস্থার পেছনের জেনেটিক কারণ
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের একটি আবাসিক এলাকায় বেড়ে উঠেছেন ইমাদ। তার বাবা ২০১৫ সালে মারা যান। তার বাবাও ছিলেন খর্বাকৃতির। তবে তার মা ছিলেন স্বাভাবিক উচ্চতার। ইমাদের বড় বোনও খর্বাকৃতির। কিন্তু তার ৩২ বছর বয়সি ছোট ভাই আবার স্বাভাবিক উচ্চতার।
ডাক্তার জানিয়েছেন, ইমাদ ও তার বোন তাদের বাবার কাছ থেকে এ জেনেটিক গঠন পেয়েছেন। অপরদিকে, তাদের ভাই তাদের মায়ের কাছ থেকে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য পেয়েছেন।
সাংবাদিক হিসেবে ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ইমাদ প্রথম জানতে পারেন যে তার এই জেনেটিক অবস্থা পারিবারিক। ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জেনেছেন, পরিবারের ইতিহাসে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের (প্রথম কাজিন) মধ্যে বিয়ে হওয়ার কারণে এই জেনেটিক অবস্থা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
ইমাদ বলেন, 'আমাদের পরিবারে একাধিক প্রথম-কাজিনের মধ্যে বিয়ে হয়েছে। এমনকি তাদের থেকে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় কাজিনদের মধ্যেও অনেকের বিয়ে হয়েছে। ডাক্তাররা জানান, যখন প্রথম কাজিনদের রক্তের গ্রুপ এক হয় এবং একই ধরনের জেনেটিক সমস্যাও থাকে, তখন তাদের সন্তানদের মধ্যে এমন জেনেটিক মিউটেশন ঘটতে পারে।'
২০১২ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর নিবন্ধে দেখা গেছে, প্রথম-কাজিনের মধ্যে বিয়ে রিসেসিভ জেনেটিক অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ এ দম্পতিদের মধ্যে একই রকম জেনেটিক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। আর এ পরিস্থিতি তাদের সন্তানদের মধ্যে রিসেসিভ সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়, 'দম্পতির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক যত নিকট হবে, তাদের সন্তানদের মাঝে এক বা একাধিক ক্ষতিকর রিসেসিভ জিনের অভিন্ন কপি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে।'
একন্ড্রোপ্লাসিয়া কি এসব কারণে হতে পারে? বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণা এখনও হয়নি। তবে, ২০২২ সালে 'ক্লিনিকো এপিডেমিওলজিকাল প্রোফাইল অফ শর্ট স্ট্যাচার অ্যাট এ টারশিয়ারি কেয়ার সেন্টার ইন বাংলাদেশ' শিরোনামের একটি গবেষণায় ডা. বিশ্বাস দেখতে পান যে, ছোট আকারের শিশুদের ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি জিনগত কারণ ছিল। আর এসবের বেশিরভাগই পারিবারিক সূত্রে পাওয়া যায়। এ গবেষণাটি ৩-১৪ বছর বয়সি ১০০ জন খর্বাকার শিশুকে নিয়ে করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ছোট আকৃতির শিশুদের (এসএস) মধ্যে এন্ডোক্রাইন কারণে দীর্ঘস্থায়ী সিস্টেমিক অসুস্থতা এবং অপুষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে। ডা. বিশ্বাস বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, "বাংলাদেশে এসএস-এর সাধারণ প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই, তবে এর অনেক কারণ রয়েছে।"
যদিও ইমাদের খর্বতা জেনেটিক, তবে বাংলাদেশে অপুষ্টি, হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতো অন্যান্য কারণে শারীরিক আকৃতি খর্বাকার হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডা. বিশ্বাস।
খর্বাকার ব্যক্তির জন্য সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা লিটল পিপল অফ আমেরিকার (এলপিএ) মতে, প্রায় ৪০০ ধরনের ডোয়ার্ফিজম রয়েছে এবং এটি প্রতি ১০,০০০ জনের মধ্যে একজনের হতে পারে।
এমনকি, সাধারণ উচ্চতার পরিবারেও ডোয়ার্ফিজমে আক্রান্ত ব্যক্তি জন্ম নিতে পারে।
২০২০ সালে বাংলাদেশে একন্ড্রোপ্লাসিয়ার পাঁচটি কেস নিয়ে করা 'স্কেলেটাল ডিসপ্লাসিয়া' শিরোনামের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই অবস্থায় আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুই সাধারণ উচ্চতার বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, "এসব কেস সহজেই সংগ্রহ করা যাচ্ছিল। তাই ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে একন্ড্রোপ্লাসিয়া খুব বিরল নয়। তবে এই অবস্থার গুরুত্ব পর্যাপ্তভাবে মূল্যায়িত হয়নি এবং আক্রান্তরা প্রয়োজনীয় সেবা ও সহায়তা প্রায়ই পায় না।"
এই জেনেটিক ব্যাধির কোনো চিকিৎসা নেই, তবে পারিবারিক এবং সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন। একটি শিশু এই ব্যাধিতে আক্রান্ত কি না, তা খুব ছোটবেলা থেকেই নির্ণয় করা যায়।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স কমিটি অভিভাবক এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতি বাচ্চাদের উচ্চতা, ওজন এবং মাথার পরিধি পর্যবেক্ষণ করতে এবং বিশেষভাবে একন্ড্রোপ্লাসিয়ার জন্য স্ট্যান্ডার্ডাইজড গ্রোথ চার্ট ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে। হাঁটাচলায় বাধা সৃষ্টি হলে, হাঁটু বাঁকানো হলে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত বলেও জানায় কমিটি।
বাড়িতে বনাম বাড়ির বাইরে
চট্টগ্রামে পড়াশোনা শেষ করেন ইমাদ। তার ভাই ও কাজিনেরা চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করলেও, যাতায়াতে সুবিধার জন্য ইমাদ এলাকারই স্কুলে ভর্তি হন। ইমাদকে বলা হয়েছিল, সে লোকাল বাসে চলতে ফিরতে পারবেন না।
ইমাদ বলেন, "পরিবার এবং বন্ধুদের সহানুভূতিশীল পরিবেশে বড় হওয়ায়, কখনও নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়নি, কখনও বহিরাগত মনে হয়নি। আমি অনুভব করি যে এটি আমার পরিবারের শিক্ষার ফলাফল, তাদের জীবনদর্শন, যা একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "তার পরিবার তাকে মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে তার শিকড়ের সাথে সংযুক্ত রেখেছে। মানুষ অবাক হয় যখন শোনে যে আমি আমার স্বাভাবিক উচ্চতার বন্ধুদের সাথে স্থানীয় ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি। আর শুধু অংশগ্রহণই নয়, অনেক পুরোনো বন্ধুরা আজও চট্টগ্রামে গেলে আমাকে ফোন করে, সেই সাফল্যের কথা স্মরণ করে।"
ইমাদের শৈশবের বন্ধু মো. রবিউল হোসেন বলেন, "সে আমাদের সবার সাথে খুব ভালো খেলত। হয়তো তখন আমরা ছোট ছিলাম, তাই ওকে আমাদের থেকে আলাদা মনে হতো না। আর বড় হওয়ার পর, উচ্চতার পার্থক্য কোনো বিষয় ছিল না।"
উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনার পর ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন ইমাদ। তিনি জানান, তার চাচাও একজন সাংবাদিক ছিলেন। চাচার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইমাদ বলেন, "আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমার চাচা দৈনিক ইত্তেফাকের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তার গল্প খোঁজার ধরন দেখে। তিনি সারা দেশ ঘুরে, মানুষের সাথে মিশে গল্পগুলো সংগ্রহ করতেন। অনেক আগে থেকেই এটা আমার মনে গেঁথে যায় যে আমিও একদিন এই পথেই হাঁটবো।"
সেই ছোটবেলা থেকেই ইমাদ গল্প লেখা শুরু করেন এবং তার কিছু কবিতা স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জীবন অসাধারণ ছিল। শিক্ষকদের থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে পিয়ন, সবাই আমাকে চিনতেন। দ্বিতীয় বর্ষেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা শুরু করি।"
তিনি আরও বলেন, "যখন বাবাকে বললাম যে আমি সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছি, বাবা দুই দিন কোনো কথা বলেননি। পরে আমার এক কাজিন, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের শিক্ষক, তার সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হন।"
সেসময় স্মৃতি মনে করে হেসে ফেলেন ইমাদ। তিনি বলেন, "এরপর, বাবা আমার প্রতি স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন এবং আমাকে খুব সমর্থন করেন।"
তিনি আরও বলেন, "আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করলাম, আব্বা আমাকে লেখার জন্য নানা ধারণা দিতেন। আমার মা-বাবা এবং আত্মীয়রা নিয়মিত আমার লেখা পত্রিকায় পড়তেন। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।"
এইভাবে, তার পরিবার ইমাদকে কখনও 'স্বাভাবিক' মানুষের বাইরে মনে করেনি এবং তাকে 'বিশেষ' মানুষের মতোও আচরণ করেনি। তার ভাই সকালে নিজের বিছানা ঠিক করত, ইমাদকেও তাই করতে হতো। তিনি নিজের জিনিসপত্র পরিষ্কার করতেন এবং স্বাভাবিক উচ্চতার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতেন।
ইমাদ বলেন, "পরিবারে, আমাকে এবং আমার অন্যান্য ভাইবোন ও কাজিনদের ছোট ছোট কাজ করতে শেখানো হয়েছে। যেমন—বাল্ব পরিবর্তন করা, ঘরের কিছু মেরামত করা, বা ছোটখাটো কাজ করা ইত্যাদি। আমার মা আমাকে রান্না শিখানোরও চেষ্টা করতেন। পরে, অবশ্য ঢাকায় যখন চলে আসি, তখন আমি রান্না করতাম।"
এসব অভিজ্ঞতা ইমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
পেছনে ফিরে তাকিয়ে ইমাদ এখন উপলব্ধি করেন যে তার পরিবার কীভাবে তাকে গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, "সেই পরিবেশটি আমার জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ, যা আমি আমার নিজ পরিবারেও নিয়ে যেতে চাই।" ইমাদ এখন নতুন বাবা। তার সন্তানের নাম বর্ণ এবং বয়স সাত মাস।
২০২২ সালে ইমাদ এবং আইনুন নাহারের বিয়ে হয়। ইমাদ-আইনুন দম্পতি ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করেছেন এবং বিশেষ করে জানতে চেয়েছেন যে তাদের সন্তান খর্বতা নিয়ে জন্মাবে কি না। আইনুন স্বাভাবিক উচ্চতার। তাই ইমাদ জানতে আগ্রহী ছিলেন যে তাদের সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে খর্বাকার হবে কিনা। তিনি তার বাবা হওয়ার আনন্দ এবং উদ্বেগ মিশ্রিত অনুভূতির কথাও জানিয়েছেন।
ইমাদ বলেন, "একটি ভালোবাসাপূর্ণ এবং সমর্থনকারী পরিবার ছাড়া বাইরের পৃথিবীতে বৈষম্যের মুখোমুখি না হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় কেউ না।"
তিনি আরও বলেন, "অনেক সময় বাসগুলো আমাকে বাসে নিতে চাইতো না। কারণ আমার বাসে উঠতে একটু সময় লাগতো। তারা ভাবত আমি ঝামেলা সৃষ্টি করবো, তাই অপেক্ষা না করেই চলে যেত। অতীতে এমন ব্যবহারের প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মেনে নিতে শিখেছি, যদিও এটি এখনও কষ্ট দেয়।"
তবে ইতিবাচক উদাহরণও আছে। যখন ইমাদ কল্যাণপুরে থাকতেন, তখন একটি নির্দিষ্ট বাসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পরিচিত হয়ে যাওয়ার পর কন্ডাক্টররা ইমাদকে দেখে হাসিমুখে বাস থামিয়ে তাকে উঠতে সাহায্য করতেন।
এলাকার কিছু রিকশাওয়ালার সঙ্গে তার একই অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, "তাদের কয়েকজন আমাকে এখন চেনে এবং রাস্তার পাশে আমাকে দেখলে ডেকে নিয়ে যেতে চায়। এসব ছোট ছোট ইঙ্গিত আমাকে সত্যিই অনেক আনন্দ দেয়।"
শহরের নকশাও ইমাদের জন্য আরেকটি সমস্যা। ঢাকার ফুটপাতগুলো সাধারণত অনেক উঁচু এবং অসমান। এ কারণে ইমাদকে কখনও কখনও অন্যের হাতের সাহায্য নিতে হয়। ইমাদ বলেন, "কাজের পোশাকে থাকলে ফুটপাতে উঠার মতো ছোট্ট কাজেও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন হয়। এটি আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় যে, এই পৃথিবী আমাদের মতো মানুষের জন্য তৈরি নয়।"
কর্মস্থলের বিষয়ে ইমাদ বলেন, "সুইভেল চেয়ারগুলো আমাকে সহায়তা করে কারণ এগুলো সাধারণত উচ্চতায় সামঞ্জস্যযোগ্য। আমার আগের এক অফিসে, আমার বস আমার জন্য একটি উঁচু চেয়ার বানিয়েছিলেন যাতে আমি বসে আরাম করে ডেস্কে কাজ করতে পারি।"
পরিশেষে, নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন ইমাদ। তিনি বলেন, "একজন খর্বতায় আক্রান্ত মানুষ হিসেবে আমার ইচ্ছা, যখন কেউ একজন বামনকে দেখবে, তখন ভয় বা বিচলিত না হয়ে তাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া উচিত।" একজন বামনের সঙ্গে সম্মান এবং মর্যাদার সহকারে আচরণ করার শিক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ইমাদ।