শুধু মানুষের কর্মকাণ্ডেই গত ৫ দশকে কমেছে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ বন্যপ্রাণী
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/09/28/wildlife4.jpg)
পৃথিবীর বন্যপ্রাণীর ভবিষ্যতের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে চলতি মাসে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্টে দেখা যায়, মানবজাতির অর্ধশতকের কার্যক্রমেই পৃথিবীর বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৬৮ শতাংশ কমে এসেছে।
গবেষণাটিতে ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৯২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও মাছের সংখ্যার পর্যালোচনা করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের অবস্থা সবচেয়ে বিরূপ, এই অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৯৪ শতাংশ কমে এসেছে।
ডব্লিউডব্লিউএফ এক বিবৃতিতে জানায়, বন্যপ্রাণীর সংখ্যা এই হারে কমে যাওয়া মানুষ ও প্রকৃতির বিরূপ সম্পর্ক নির্দেশ করে। জীববৈচিত্র্যের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় হুমকি। ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে কমেছে মিঠাপানির স্তন্যপায়ী, পাখি, উভচর ও সরীসৃপের সংখ্যা।
ডব্লিউডব্লিউএফ এর প্রধান বিজ্ঞানী রেবেকা শ' সিএনএন-কে জানান, 'এটি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং আমি মনে করি আমরা ভয়াবহতার যেই মাত্রা চিন্তা করতে পারি এই ব্যাপারটি তারচেয়েও উদ্বেগজনক। মিঠাপানির বাস্তুসংস্থানে আমরা আশংকাজনক পরিবর্তন লক্ষ করছি। নদীতে বাঁধ দেয়া এবং পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সংস্থানের জন্য গৃহীত কার্যক্রম এর অন্যতম প্রধান কারণ।'
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/09/28/wildlife3.jpg)
মঙ্গলবার জাতিসংঘ গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি আউটলুক রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০১০ সালে ১৯৬টি দেশের স্বাক্ষরিত আইচি বায়োডাইভার্সিটি টার্গেটের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করা হয় প্রতিবেদনটিতে। বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট রোধে নেয়া এই পরিকল্পনার একটিও সফল হয়নি গত এক দশকে।
তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়। পাকিস্তানের তুষার চিতা রক্ষা ও জাপানের ক্রেস্টেড আইবিসের বিলুপ্তি রোধে নেয়া ক্যাম্পেইন ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সংরক্ষণের উদ্যোগ ছাড়া, এই দুইটি প্রাণীর সংখ্যা গত দশকে আরও দ্বিগুণ কমে যেতো।
জাতিসংঘের কনভেনশন অব বায়োলজিকাল ডাইভার্সিটির কার্যনির্বাহী সেক্রেটারি এলিজাবেথ মারুমা ম্রেমা এক বিবৃতিতে বলেন, 'জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের এই হার মানব-ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং এর প্রভাব অত্যন্ত তীব্র। পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের সার্বিক অবস্থা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানবজাতি এই হারে প্রকৃতির ক্ষতি করে প্রকৃতির অবদান এড়িয়ে গেলে, পারতপক্ষে তা আমাদেরই সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তাকে এড়িয়ে যাওয়া হবে।'
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/09/28/wildlife2.jpg)
ডব্লিউডব্লিউএফ ও জাতিসংঘের দুটি প্রতিবেদনেই বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ফলে সৃষ্ট প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারিকে। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ বাস্তুসংস্থানের স্বাভাবিক অবস্থার ক্ষতিসাধন বজায় রাখলে, ভবিষ্যতে পশুপাখি থেকে মানুষে সংক্রমণ হওয়া রোগের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
রেবেকা শ' আরও জানান, বর্তমানের এই ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা এড়ানো সম্ভব। ন্যাশনাল পাব্লিক রেডিও(এনপিআর) এর নাথান রটের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত সপ্তাহে ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা ডব্লিউডব্লিউএফ এর পদ্ধতি ব্যবহার করে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের এই হার কমিয়ে আনার উপায় উত্থাপন করেন। এই পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে আছে ভূমি সংরক্ষণ ও বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন।
নাথান রটস তার প্রতিবেদনে আরও জানান, গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য উৎপাদন ক্ষমতার অধিক খাদ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। গবেষকরা তাদের প্রতিবেদনে বলেন, 'বর্তমানে মানুষের পৃথিবীর সক্ষমতার ১.৫৬ গুণ বেশি সম্পদের প্রয়োজন সৃষ্টি হয়েছে।'