ইরানে ইসরায়েলের হামলা: স্যাটেলাইট চিত্র কী বলছে?
ইসরায়েলের গত শনিবার চালানো বিমান হামলায় ইরানের কয়েকটি সামরিক স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিবিসি ভেরিফাই। খবর বিবিসির।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মধ্যে কিছু স্থাপনা ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও বিমান প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হতো এবং একটি স্থাপনা আগে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েলি হামলার পরের স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, তেহরান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্বে পারচিনে একটি বড় অস্ত্র উন্নয়ন ও উৎপাদন স্থাপনায় বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সাথে যুক্ত।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই স্থাপনাটি রকেট উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত।
৯ সেপ্টেম্বরের উচ্চ রেজোল্যুশনের স্যাটেলাইট চিত্রের সঙ্গে ২৭ অক্টোবরের চিত্র তুলনা করে দেখা যায়, অন্তত চারটি কাঠামো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে একটি কাঠামো তেলেঘান ২ নামে পরিচিত। আগে এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আএইএ) উল্লেখ করেছে। ২০১৬ সালে এখানে আইএইএ এখানে ইউরেনিয়াম কণা থাকার প্রমাণ পায়। এ কারণে ধারণা করা হয় এখানে নিষিদ্ধ পারমাণবিক কার্যক্রম চালানো হয়েছিল।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত আরেকটি স্থাপনা পারচিন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে খোজির এলাকায় অবস্থিত।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইএসএস) ফাবিয়ান হিনজ জানিয়েছেন, 'খোজির ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কিত অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ঘনত্বের এলাকা হিসেবে পরিচিত।'
এই স্থাপনায় ২০২০ সালে একটি রহস্যজনক বড় বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, এই কমপ্লেক্সের অন্তত দুটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলার পরের স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, তেহরান থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে শাহরুদে অবস্থিত একটি সামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সেমনানে অবস্থিত এই এলাকা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উপাদান উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ফাবিয়ান হিনজ উল্লেখ করেছেন।
কাছেই রয়েছে শাহরুদ মহাকাশ কেন্দ্র, যা বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০২০ সালে এখান থেকে ইরান একটি সামরিক স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিল।
ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ইরানের বিভিন্ন স্থানে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর সফলভাবে হামলা চালিয়েছেন। তবে পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্র থেকে এই দাবি নিশ্চিত করা কঠিন।
বিবিসিও এমন একটি স্যাটেলাইট চিত্র পেয়েছি, যা বিশেষজ্ঞরা রাডার স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এতে ক্ষতির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে।
এটি পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইলামের কাছে শাহ নাখজির পাহাড়ে অবস্থিত। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান জেনসের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ জেরেমি বিনির মতে, এটি সম্ভবত সম্প্রতি আপডেট করা একটি রাডার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল।
স্থাপনাটি কয়েক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও ওপেন সোর্স বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষিত স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে দেখা গেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খুজেস্তানে অবস্থিত আবাদান তেল শোধনাগারে একটি সংরক্ষণ ইউনিটে ক্ষতির চিহ্ন শনাক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, এর কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি এবং ইরানের বিভিন্ন এলাকায় ধ্বংসাবশেষ বা ভুলবশত উৎক্ষেপিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আঘাতে কিছু ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে চালানো বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল আবাদান তেল শোধনাগারটি।
শনিবার ইরানি কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েল খুজেস্তান প্রদেশে আঘাত হেনেছে।
আবাদান তেল শোধনাগার ইরানের বৃহত্তম তেল শোধনাগার। এটি প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদনে সক্ষম বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন।
স্যাটেলাইট চিত্র সবসময় ক্ষতির চিহ্ন নির্ধারণে নিশ্চিত তথ্য সরবরাহ করতে পারে না।
উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের যাচাইকৃত ছবিতে হযরত আমির ব্রিগেড বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কাছে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে যা প্রমাণ করে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে। তবে রোববারের তোলা স্যাটেলাইট ছবিতে ছায়ার কারণে সেখানে কোনো ক্ষতি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
এ বছর অক্টোবরের শুরুতে ইরান দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর আগে এপ্রিলে ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল তারা।