জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে স্মার্টফোন উৎপাদন বেড়েছে ২৭.৫৮ শতাংশ
বৈদেশিক মুদ্রানীতি সহজ হওয়া এবং উৎপাদনকারীদের ইনভেন্টরি বড় করার প্রতিযোগিতার সুবাদে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে স্মার্টফোন উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭.৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে দেশে ৬৫ লাখ ইউনিটেরও বেশি স্মার্টফোন উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে স্মার্টফোন উৎপাদন হয়েছিল ৫১ লাখ ইউনিট।
সেপ্টেম্বরে স্থানীয়ভাবে ৯.১২ লাখ স্মার্টফোন উৎপাদিত হয়, যা ফেব্রুয়ারির ৯.২৫ লাখ ইউনিটের পর বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন।
জুনে মাসিক উৎপাদন ৫.৬২ লাখে নেমে এলেও পরে তা ধীরে ধীরে বেড়েছে। বর্তমানে এক ডজনেরও বেশি ব্র্যান্ড তাদের পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বা সংযোজন করে।
বর্তমানে দেশের বার্ষিক স্মার্টফোন চাহিদার ১৮–২০ শতাংশ মেটাচ্ছে শাওমি বাংলাদেশ। ব্র্যান্ডটির বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'বিদেশি মুদ্রা সংকটের কারণে ২০২৩ সাল উৎপাদনকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।'
তিনি আরও জানান, নতুন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এবং প্রতি ৩-৪ বছরে ফোন পরিবর্তনকারী গ্রাহকদের চাহিদা থাকার পরও চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে বাজার চাহিদা এখনও নিম্নমুখী। তবে কোম্পানিগুলো আগামী মাসগুলোর জন্য মজুত নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
মহামারির সময় দেশের আনুষ্ঠানিক বাজারে প্রায় ১.২ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেছে স্থানীয় কারখানাগুলো। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে মূল্যবৃদ্ধি এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে স্মার্টফনের চাহিদা ১ কোটির নিচে নেমে এসেছে। আর বর্তমানে স্থানীয় কারখানাগুলো আনুষ্ঠানিক বাজারের প্রায় ৯৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে।
আইস্মার্টইউ টেকনোলজি বিডি-র সিইও রেজওয়ানুল হক বলেন, 'এ বছর কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি সহজ হয়েছে। এছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোনের চাহিদাও আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।' তিনটি ব্র্যান্ড টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল নিয়ে বাজারের প্রায় ৩৮ শতাংশ হিস্যা আছে কোম্পানিটির।
রেজওয়ানুল হক ও জিয়াউদ্দিন চৌধুরী দুজনেই গ্রে মার্কেটের পণ্য আমদানির নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গ্রে মার্কেটে আমদানি করা পণ্য অনুমোদিত প্রস্তুতকারকদের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
রেজওয়ানুল বলেন, 'আমাদের কাছে কোনো অফিশিয়াল তথ্য নেই; তবে ধারণা করছি, প্রতি বছর প্রায় ৩০-৪০ লাখ রিফার্বিশড, আনঅফিশিয়াল বা ব্যবহৃত স্মার্টফোন দেশের বাজারে বিক্রি হয়, যা মোট চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ।'
এদিকে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফিচার ফোনের উৎপাদনও ১.১৩ কোটি থেকে বেড়ে ১.৪৪ কোটিতে পৌঁছেছে। আনুষ্ঠানিক আমদানি করা স্মার্টফোনের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৬৬ হাজার ইউনিট ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ২৫ হাজারের বেশি ফাইভজি ফোন।
দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ফোনের ওপর কর ২০–২৫ শতাংশ। আর আমদানি করা ফোনের ওপর মোট ৫৭ শতাংশ শুল্ক- কর আরোপ করা হয়।
রেজওয়ানুল বলেন, এ বাজারে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, যা প্রবৃদ্ধির জন্য বড় সুযোগ।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জানান, আনুষ্ঠানিক বাজারে বিক্রি দুই-তৃতীয়াংশ স্মার্টফোনের দাম ২০ হাজার টাকার নিচে। আর ৩০ হাজার টাকার বেশি দামের ফোন দেশের বার্ষিক বিক্রির মাত্র ২ শতাংশ।