যুক্তরাজ্যের ৫ থেকে ৭ বছর বয়সি এক-চতুর্থাংশ শিশুর স্মার্টফোন আছে
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকমের গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের ৫ থেকে ৭ বছর বয়সি এক-চতুর্থাংশ শিশুর নিজেদের স্মার্টফোন আছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাজ্যে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের বয়সসীমা ন্যূনতম ১৩ বছর হওয়া সত্ত্বেও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় দুইজন শিশু এটি ব্যবহার করছে।
অফকম এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছে, বাবা-মা শিশুদের নিয়মের মধ্যে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গবেষণার তথ্য ও উপাত্ত স্মার্টফোন শিল্পের হর্তাকর্তাদের জন্য একটি সতর্কবাণী এবং শিশুদের রক্ষার্থে তাদের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
মিডিয়া এবং অনলাইন জগতের সাথে শিশুদের সম্পর্ক নিয়ে করা বার্ষিক গবেষণায় অফকম বলেছে, মেসেজিং পরিষেবাগুলো ব্যবহার করে এমন পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সি শিশুদের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী শিশুর সংখ্যা ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ ও লাইভস্ট্রিম ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। অনলাইন গেমিংয়ে আসক্ত শিশুর সংখ্যা গত বছর ৩৪ শতাংশ থাকলেও এ বছর তা বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে।
১৩ বছরের কম বয়সি অর্ধেকেরও বেশি শিশু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে, যদিও এটি বেশিরভাগ বড় প্ল্যাটফর্মের নিয়মের বিরুদ্ধে যায়। অনেক শিশুই এসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমা চালু করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্য বয়সসীমা বাড়ানোর কথাও বলছেন।
বিবিসির সাথে কথা বলা কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে রাখা কঠিন যেহেতু তাদের অনেক বন্ধুই এসব অ্যাপ ব্যবহার করে। 'অনেকটা চাপে' হয়ে বাচ্চাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিতে বাধ্য হন তারা।
অফকমের রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় 'স্মার্টফোন ফ্রি চাইল্ডহুড' ক্যাম্পেইনের ক্লেয়ার ফার্নিহাউ বিবিসিকে বলেছেন, "সমাজ ধরেই নিয়েছে আমাদের স্মার্টফোন লাগবেই এবং বর্তমানে এটার তীব্র প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি।"
কিন্তু ডিজিটাল ফিউচার ফর চিলড্রেন সেন্টারের ডিরেক্টর প্রফেসর সোনিয়া লিভিংস্টোন বলেন, প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করে শিশুদের রক্ষা করার চেষ্টা ভুল।
তিনি বলেন, "এটি প্রথম প্রজন্ম যারা শক্তিশালী ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহার করে। এটা তাদের জন্য খুবই চমৎকার একটি বিষয়। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কম্পিউটারের যে ডিজাইন বের করছে সেটি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক। তাই ডিজাইনের ব্যাপারে শিশু অধিকারের বিষয়টি চিন্তা করতে হবে।"
অফকম বলেছে, স্মার্টফোনের জন্য নতুন বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া সরকারের জন্য ভাববার বিষয়।
মে মাসে এটি শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে এবং অনলাইনে ক্ষতিকারক কনটেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এআই-এর নতুন ব্যবহারের বিষয়ে প্রযুক্তিভিত্তিক ফার্মগুলোকে পরামর্শ দেবে।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন বিষয়ক সেক্রেটারি অব স্টেট মিশেল ডনেলান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিকে সরকার সবার আগে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়