গুম কমিশনে জমা ১৬০০’র বেশি অভিযোগ, মিলেছে ৮টি টর্চার সেলের সন্ধান
গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের কাছে এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। পাশাপাশি পাওয়া গেছে, আটটি গোপন নির্যাতন সেলের সন্ধান। তবে তদন্তের স্বার্থে এই গোপন আটককেন্দ্র বা টর্চার সেলগুলো কাদের দ্বারা পরিচালিত হতো সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকার গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১,৬০০ অভিযোগের মধ্যে কমিশন ইতোমধ্যে ৪০০টি অভিযোগ পর্যালোচনা করেছে এবং ১৪০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বেশিরভাগ অভিযোগেই দেখা গেছে, গ্রেপ্তারের পর আসামিকে আদালতে যথাসময়ে হাজির করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিটি বাহিনীকে বিগত সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল এবং বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
সরকারের সমালোচনা করায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে গুম ও নির্যাতনের তথ্য পেয়েছে কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, এ পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ডিবির বিরুদ্ধে ৫৫টি, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বিরুদ্ধে ৩৭টি, ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ২৬টি ও পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
কমিশনের সদস্য মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, তাদের কাছে প্রায় দুইশ মানুষ নিখোঁজের তথ্য আছে। তবে তাদের কতজন গুম হয়েছেন তা নিশ্চিত নয়। কমিশনের প্রতিবেদনে ঢাকায় আটটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়।
নুর খান বলেন, "আমরা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দ্বারা পরিচালিত একটি সেল খুঁজে পেয়েছি যার পরিমাপ মাত্র ৩ দশমিক ৫ বাই ৪ ফুট। সেখানে একটি ছোট দরজার একটি ফুটো ছাড়া আলোর কোনো উৎস ছিল না, এবং একটি ছোট ড্রেন ছাড়া কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা ছিল না'। নির্যাতিত ব্যক্তিদের এই ছোট কক্ষে বছরের পর বছর বন্দী থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গুমের সঙ্গে দেশি-বিদেশি কারা সম্পৃক্ত তা খুঁজে দেখা হচ্ছে বলেও জানান কমিশন প্রধান।
হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের অপর চার সদস্য হলেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন। কমিশন ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুসারে তদন্ত কমিশন জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবে এবং এ বিষয়ে সুপারিশ করবে।