যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফক্স নিউজের পূর্বাভাস
ফক্স নিউজের পূর্বাভাস অনুযায়ী, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ফক্স নিউজ তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ২৭৭ ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের ঝুলিতে রয়েছে ২২৬ ইলেক্টোরাল ভোট। প্রেসিডেন্ট হতে উভয় প্রার্থীর জন্য প্রয়োজন ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট। সে হিসেবে ট্রাম্প-ই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া বাকি এখনও।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে ট্রাম্প পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে সমর্থকদের সামনে বলেন, "আমেরিকা আমাদেরকে একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।"
ট্রাম্পের রানিং মেট, সেনেটর জেডি ভ্যান্স সমর্থকদের সামনে বলেন, "আমরা আজকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পুনরুত্থান দেখলাম।"
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি চলছে সিনেট, হাউজ ও গভর্নর নির্বাচন। অধিকাংশ রাজ্যের ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে গেছে এবং ফলাফল আসতে শুরু করেছে। ফক্স নিউজ অন্যযায়ী ট্রাম্প ২৭৭ ইলেক্টোরাল ভোট পেলেও, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এখন পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ২০মিনিট) রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২১৪ ইলেক্টোরাল ভোট। তবে সব সংবাদমাধ্যমের হিসেবেই কমলার চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে, সিএনএন সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি পেয়েছে ৫১টি আসন। আর ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়েছে ৪১টি আসন। পশ্চিম ভার্জিনিয়া এবং ওহায়োতে জয়লাভ করে রিপাবলিকানরা মার্কিন সিনেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা নিশ্চিত করেছে যে আগামী বছর কংগ্রেসের অন্তত এক শাখা তাদের হাতে থাকবে।
তবে কংগ্রেসের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে রিপাবলিকানরা বর্তমানে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে রিপাবলিকান পার্টি পেয়েছে ১৯১টি আসন। আর ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়েছে ১৬২টি আসন।
প্রেসিডেন্ট হতে উভয় প্রার্থীর জন্য প্রয়োজন ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট। তবে গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটগুলোর ফলাফল আসতে সময় লাগতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবার নজর থাকে এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যের দিকে। এগুলো হলো- জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং উইসকনসিন। এই সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যের মধ্যে ইতোমধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া এবং পেনসিলভেনিয়ার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে বিজয়ী ট্রাম্প।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান জিম জাস্টিস সিনেটের একটি খালি আসন জিতে নেন, যা আগে ডেমোক্র্যাট জো ম্যানচিনের ছিল। ওহায়োতে রিপাবলিকান বার্নি মোরেনো ডেমোক্র্যাট শেররড ব্রাউনকে পরাজিত করেন। এই দুটি জয় নিশ্চিত করেছে যে রিপাবলিকানদের হাতে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
এছাড়া, রিপাবলিকানরা হাউসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তিনটি আসন ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে দখল করেছে। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা আলাবামায় রিপাবলিকানদের একটি আসন জিতে নেয়। টেক্সাসে, রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ পুনঃনির্বাচনে ডেমোক্র্যাট কলিন অলরেডকে হারিয়েছেন।
সিনেটে প্রথমবারের মতো দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী একসাথে কাজ করবেন। গণমাধ্যমের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাট অ্যাঞ্জেলা আলসোব্রুকস মেরিল্যান্ডে এবং লিসা ব্লান্ট রোচেস্টার ডেলাওয়্যারে জয়ী হয়েছেন। এছাড়া, প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট সারাহ ম্যাকব্রাইড। তিনি ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসের আসনে জয়লাভ করেছেন।
এছাড়া ট্রাম্পের জয়ী হওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, মিসৌরি, ওহায়ো, মন্টানা, টেক্সাস, লুউসিয়ানা, সাউথ ডাকোটা, নর্থ ডাকোটা, আরকান্সাস, ইন্ডিয়ানা, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, আলাবামা, সাউথ ক্যারোলাইনা, ওকলাহোমা, মিসিসিপি, টেনেসি, ফ্লোরিডা এবং অন্যান্য।
অন্যদিকে কমলা জয় পেয়েছেন, নিউ ইয়র্ক, ভারমন্ট, ইলিনয়, রোড আইল্যান্ড, কলোরাডো, ম্যাসাচুসেটস, মেরিল্যান্ড, নিউ জার্সি, ডেলাওয়্যার, কানেকটিকাট, ডিস্ট্রিক্ট অফ কলোম্বিয়া এবং অন্যান্যতে।
ট্রাম্প ২০১৬ এবং ২০২০ উভয় নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয়লাভ করেছিলেন, অন্যদিকে বাইডেন ২০২০ সালে বাকী ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলো খুব সামান্য ব্যবধানে জয় করেছিলেন।
এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়নি, যার অর্থ হলো প্রতিটি রাজ্যে লড়াই এখনও হাড্ডাহাড্ডি অবস্থায় রয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই অবস্থান প্রতি মিনিটে পরিবর্তিত হচ্ছে।
জাতীয় জরিপ বলছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভোটার যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন। ট্রাম্প তার প্রচারে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অন্যদিকে, হ্যারিস সতর্ক করেছেন যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ গণতন্ত্রের ভিত্তিকে বিপন্ন করতে পারে।