‘এই মামলাটি বাংলাদেশের মানুষের মামলা’: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার শুনানিতে হাইকোর্ট
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু আলোচিত বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিটের রুল শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, এ মামলা এখন আর কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের নয়, বরং সমগ্র দেশের মানুষের মামলা।
বুধবার রুলের শুনানিতে (৬ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, 'এই মামলাটি কোনো পক্ষের নয়, এটি এখন পুরো বাংলাদেশের মানুষের মামলা।'
এদিন সুজনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। শুনানিতে এই আইনজীবী সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী একটি 'মোটিভেটেড অ্যামেন্ডমেন্ট' বলে উল্লেখ করেন। এবিষয়ে আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া বলেন, 'দেশে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে না হয়, বার-বার যাতে একই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মুলত পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়।'
রুল শুনানিতে বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল হাইকোর্টকে বলেন, 'মাই লর্ড, এই মামলাটিতে আমরা ভিন্ন ভিন্নভাবে যুক্ত হলেও এটিতে কোনো পক্ষ-বিপক্ষের বিষয় নেই। এটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা।'
তখন হাইকোর্ট বলেন, 'হ্যাঁ, এই মামলাটি কোনো পক্ষের নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের মানুষের মামলা। এই মামলার ক্লায়েন্ট পুরো বাংলাদেশের জনগণ।'
সংবিধান সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল-সংক্রান্ত শুনানিতে বিএনপির পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনও অংশ নেন।
সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও আরও চারজনের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সরকারকে সেই ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।
রুলের ওপর শুনানির দ্বিতীয় দিনে সুজন সম্পাদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। একে 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংশোধনী' অভিহিত করে তিনি বলেন, 'দেশে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে না হয়, বারবার যাতে একই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই মূলত পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়।'
এরপর আদেশের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন আদালত।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়।
অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয় এ সংশোধনীতে।
এছাড়া আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
গতকাল শুনানিতে বিএনপির পক্ষে আরও ছিলেন বদরুদ্দোজা বাদল ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইনসানিয়াত বিপ্লব দলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুর রউফ ও ইশরাত হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাশ হয় ও ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি গত আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন। এই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন। এই রুল শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পক্ষভুক্ত হয় বিএনপি ও জামায়াত। সর্বশেষ গত বুধবার পক্ষভুক্ত হয় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনসানিয়াত বিপ্লব।