মুনতাহা হত্যা: গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়াসহ ৪ জনের ৫ দিনের রিমান্ড
সিলেটের কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তারসহ ৪ জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেটের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আশিক উদ্দিন আশুক জানান, 'বাদীপক্ষের আইনজীবীরা ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।'
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন- নিহত মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার সুমি ওরফে শামীমা (২৫), তার মা আলিফজান বেগম (৫৫), তাদের প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগম (৩৫)।
এদের মধ্যে মার্জিয়া আক্তারকে শনিবার রাতেই সন্দেহবশত আটক করে পুলিশ। আর রোববার ভোরে মুনতাহার লাশ সরানোর সময় মার্জিয়ার মা আলিফজান বেগমকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসে। এরপর তাদের প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে আটক করা হয়।
রোববার এ ঘটনায় আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায়- তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার ভোরে নিজ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ভোরে মার্জিয়ার মা আলিফজান একটি শুকনো খালের মাটিতে পুঁতে রাখা মুনতাহার মরদেহ তুলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় স্থানীয়রা দেখে ফেললে তিনি মরদেহ পুকুরে ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন ও মুনতাহার লাশ উদ্ধার করেন। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা মার্জিয়াদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়।
গত ৩ নভম্বের দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল কানাইঘাট উপজেলার ছয় বছর বয়সী এই শিশু। মুনতাহা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। ফুটফুটে এই শিশু মুনতাহার নিখোঁজের ঘটনায় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় হয়। তার সন্ধান চেয়ে দেশ-বিদেশে অনেকে পুরষ্কারও ঘোষণা করেন। তার লাশ উদ্ধারের খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনদের অনেকে।
পুলিশ জানিয়েছে, মুনতাহা হত্যার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে মেয়ে নিখোঁজের পর বাবা শামীম আহমদের করা সাধারণ ডায়েরিকে (জিডি) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলায় রুপান্তর করে এই চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল জানান, 'প্রায় চার মাস আগে মুনতাহার গৃহশিক্ষক হিসেবে শামীমা পড়ানো শুরু করেন। কিছুদিন আগে মুনতাহার পরিবার তাকে পড়াতে মানা করে দেয়। এসময় তার বিরুদ্ধে কাপড় চুরিরও অভিযোগ আনা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিশু মুনতাহাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।'
নিহত মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ বলেন, পড়ানো শুরু করার পর প্রায়ই মুনতাহার কাপড় কাউকে না বলে মার্জিয়া ফেলে দিতেন। কেউ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতেন, এত দামি কাপড় বাচ্চাদের পরানো ঠিক নয়। আবার আমাদের ঘর থেকে হারিয়ে যাওয়া কাপড়ও তাদের ঘরে পাওয়া যেত। এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে শামীমা বলতেন, এসব কাপড় কে নিয়েছেন, তিনি জানেন না।
তিনি বলেন, আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।