ডাম্পলিং খেতে ১ লাখ শিক্ষার্থীর রাতের বেলায় সাইকেলে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি; অচল সড়ক-শহর
শুরুটা হয়েছিল রাতের বেলায় সাইকেলে চেপে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চীনের চার শিক্ষার্থীর ডাম্পলিং খেতে যাওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু এই ট্রেন্ড এমনই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় যে এক রাতেই ১ লাখ শিক্ষার্থী সড়কে নেমে আসেন ডাম্পলিং খেতে যাওয়ার জন্য।
লাখ শিক্ষার্থীর সাইক্লিংয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে লেগে যায় যানজট। ঘটনাটি শুক্রবারের, চীনের হেনান প্রদেশে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাক দেওয়া ডাম্পলিং সহযোগে 'ব্রেকফাস্ট অভিযান' শেষ হয় মধ্য চীনের দুই শহরে ব্যাপক যানজট দিয়ে।
শিক্ষার্থীদের এই মিশন প্রাচীন নগরী কাইফেংয়ের অর্থনীতিতে সুবাতাস আনার কথা ছিল। কিন্তু এ ট্রেন্ড ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় উল্টো ফল বয়ে আনল।
শুক্রবার রাতে ঝেংঝু শহর থেকে ভাড়া করা বাইসাইকেলে যাত্রা শুরু করে ১ লাখ মানুষ কাইফেংয়ে পৌঁছাতে শুরু করে।
স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকায় শেষে কাইফেংয়ের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যায়। আবাসন, রেস্টুরেন্ট ও পাবলিক স্পেসগুলোতে উপচে পড়ে মানুষ।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ছয় লেনের ঝেংকাই অ্যাভিনিউ এবং ঝেংঝু ও ছোট্ট শহর কাইফেংয়ের মধ্যবর্তী এক্সপ্রেসওয়েতে চলছে হাজার হাজার সাইকেলচালক। পুলিশ লাউডস্পিকারে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে।
শুক্রবারের মতো পরিস্থিতি এড়াতে কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সড়ক ও সাইকেলপথে চলাচলে সাময়িক বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। বাইক শেয়ারিং অ্যাপগুলো সতর্ক করে দিয়েছে, নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বাইক সরানো হলে তারা বাহনগুলো রিমোট লক করে দেবে।
ঝেংঝুর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাইক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার জন্য অনুমতিপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গত জুনে ঝেংঝু বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর সাইকেলে চেপে কাইফেং যাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এই ট্রেন্ড। ঐতিহ্যবাহী গুআন তাং বাও নামক বড় আকারে স্যুপ ডাম্পলিং খেতে গিয়েছিলেন তারা। তাদের এই ভ্রমণের পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
এই ট্রেন্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দিন দিন কাইফেংয়ে পাড়ি জমানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সর্বজনের অংশগ্রহণে এই অরাজনৈতিক কাজটিকে শুরুতে স্বাগতই জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। চীনের অন্যান্য অনেক শহরের মতো কাইফেংও আরও বেশি স্থানীয় পর্যটক টানার চেষ্টায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ফ্রি এন্ট্রিসহ নানা সুবিধা দেয়।
সরকারি সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি তরুণ পর্যটকদের নবোদ্যমে কাইফেংয়ে আগমন এবং তাদের উচ্ছ্বাসের প্রশংসা করে। পত্রিকাটি পূর্বাভাস দিয়েছিল, গত সপ্তাহে শহরটিতে প্রায় ২ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটবে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই কাইফেংয়ে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজারে পৌঁছে। শুক্রবার তা ১০ গুণ বেড়ে প্রায় এক থেকে দুই লাখে দাঁড়ায়। যার ফলে অচল হয়ে পড়ে সড়ক।
কাইফেংয়ের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষ আসায় তাদের শহর সাইকেলে গিজগিজ করছে; যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে এই বিশৃঙ্খলার জন্য ক্ষমা চাইলেও এই ভ্রমণকে সমর্থন জানায়।
শিক্ষার্থীদের এই কাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া এবং কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যম যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই উৎসাহ দিয়েছিল কি না—এসব নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া উইবোতে একজন মন্তব্য করেছেন, 'প্রথমে এ কাজের পক্ষে জোরেশোরে প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু শেষে সব তালগোল পাকিয়ে গোটা উদ্যোগটাই ব্যর্থ হলো। মিডিয়ার নিজেদের কাজ নিয়ে ভাবা উচিত। শুরুতে আপনারাই তো এই কাজে উৎসাহ দিয়েছিলেন, প্রশংসা করেছিলেন।'
রাতের সাইক্লিংয়ের এই ট্রেন্ড চীনের আরও কয়েকটি বড় শহরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে হেনান প্রদেশের মতো বিপুল জনসমাগমের আর কোথাও দেখা যায়নি।