ফ্যাসিবাদী শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা উচিত: উপদেষ্টা মাহফুজ
১৯৭১ সালের পর কেউ কোনো অন্যায় করে থাকলে তাকে অবশ্যই বিচার ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, "শুধু মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিল বলে, তাদের ছাড় দেওয়া উচিত নয়।"
শেখ পরিবারের সদস্যদের ছবি সরানো নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ। তার মতে, স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার জন্য শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি দেওয়া উচিত ও ক্ষমা চাওয়া উচিত। তাছাড়া তিনি যে অপরাধ করেছেন তারও শাস্তি পাওয়া উচিত বলে মনে করেন মাহফুজ।
আর বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলার জন্য যারা দুঃখপ্রকাশ করছেন, তারা ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট হওয়া গণ-আন্দোলন এবং জনগণের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "৭১ পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিব এবং গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার যে ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছেন তার জন্য তাদের বিচার হওয়া উচিত এবং শেখ পরিবারের বন্দনা করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য হুবহু বাংলায় অনুবাদ করে তুলে ধরা হলো:
"পতিত শেখেরা!
শেখ মুজিব এবং তার কন্যা (আরেকজন শেখ) তাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জন্য জনগণের রোষের মুখে পড়েছেন। তাদের একমাত্র পার্থক্য হলো, শেখ মুজিব শেখ হাসিনার মতো ছিলেন না। শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার মানুষের মাঝে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। জনগণ তাকে পাকিস্তানি নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনুসরণ করেছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর তিনি নিজেই একনায়কে পরিণত হন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়ে। তার স্বৈরাচারী ভূমিকার জন্য ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুতে জনগণ শোক প্রকাশ করেনি।
তবে শেখের দল ও পরিবারের সদস্যরা যদি ১৯৭১ পরবর্তী গণহত্যা, গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ এবং অবশ্যই ১৯৭২ সালের সংবিধানের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান, তাহলে শেখ স্বাধীনতার আগের ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন। কারণ এ সংবিধান বাকশালের পথকে প্রশস্ত করেছিল। তাছাড়া শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকেও তার স্বৈরাচারী শাসনের জন্যও স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হবে (যদিও তিনি শেখ মুজিবকে উপহাস ও বিদ্রূপের বস্তুতে পরিণত করেছেন)। তাদের মুজিববাদ এবং শেখ পরিবারের বন্দনাও ত্যাগ করা উচিত।
১৯৭১ পরবর্তী স্বৈরাচারী শাসনের জন্য শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে (যদিও কর্মকর্তারাই তা করেছেন)। শেখ হাসিনা তার বাবার নাম ব্যবহার করে মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন। কিন্তু জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের পর বাংলাদেশের জনগণ তাদের ছবি, মূরাল এবং ভাস্কর্য সব নামিয়ে দিয়েছে।
তাই কেউ যদি শেখদের ছবি সরিয়ে ফেলায় দুঃখ প্রকাশ করেন, তাহলে তাকে গণ-আন্দোলন এবং জনগণের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে ঐতিহাসিক ত্রুটি ও ভুল প্রয়োগকে সংশোধন করতে এসেছি। মনে রাখবেন, '৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের। আবার, যেকোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি '৭১ সালের পর কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে তার বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার জন্য তাদের ছাড় দেওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশের মানুষের উচিত, শাসক পরিবারকে দেবতুল্য না ভেবে এসবের ঊর্ধ্বে নিজেদের নিয়ে আসা। ৪৭ ও ৭১ সালের পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনাও আমাদের মধ্যে জীবিত থাকা উচিত।"