বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্স
এক দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্য দেশের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজি লম্বা সময় ধরেই অন্য লিগে খেলে আসছে। দেশের বাইরের টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও এসব ক্ষেত্রে সাধারণত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয় থাকে না বা বিষয়টি সেভাবে উল্লেখ করা হয় না। তবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি লিগে খেলতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা রংপুর রাইডার্সের ক্ষেত্রে এভাবে ভাবা হচ্ছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানাতে আগামী ২৬ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া গ্লোবাল সুপার লিগে খেলবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল (বিপিএল) রংপুর রাইডার্স। আসরটির প্রস্তুতি হিসেবে সহকারী কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলের অধীনে গত কিছুদিন ধরে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একডেমি মাঠে অনুশীলন করে আসছে দলটি। আগামী ১৮ নভেম্বর দেশ ছাড়ার আগে আজ শনিবার মিরপুর স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।
টুর্নামেন্টে নিজেদের পরিকল্পনা, লক্ষ্য নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি আজ তারা জার্সি উন্মোচন করেছে। দলটির অধিনায়ক ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন টিম ডিরেক্টর শাহনিয়ান তানিম ও বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ৫ দলের অংশগ্রহণের টুর্নামেন্টটিতে রংপুর রাইডার্স কেবল নিজেদেরই নয়, বরং বিসিবি ও দেশেরও প্রতিনিধিত্ব করবে বলে মনে করেন নাজমুল আবেদীন। দলটির ভালো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বিসিবি বা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতে পারে বলে বিশ্বাস তার।
বিসিবির এই পরিচালক বলেন, 'আমার মনে হয়, যে কারণে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, এটা খুব ভিন্ন ধরনের একটা ঘটনা। বাংলাদেশের একটা দল গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলতে যাচ্ছে, এমনটা আগে কখনও হয়নি। এটা একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আমাদের ক্রিকেটকে। রংপুর রাইডার্সকে অভিনন্দন। এই মুহূর্তের দলগুলোর মধ্যে সেরা দল হিসেবেই এখানে যাচ্ছে তারা। পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের নিয়ে, সংগঠিত একটা দল নিয়ে তারা যাচ্ছে।'
'আমরা আশা করব তারা ওখানে ভালো করবে। শুধু ভালো করাই না, এটায় দিয়ে আমাদের অনেক জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের একটা অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। সবার জন্যই এটা একটা অভিজ্ঞতা হবে। রংপুর রাইডার্স শুধু তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে তা নয়, তারা বিসিবিকে কিংবা তার চেয়েও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে এই টুর্নামেন্টে। আমি আশা করব তারা তাদের সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করবে। আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।' যোগ করেন তিনি।
বিদেশের মাঠে ভালো করার চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রংপুর রাইডার্স, আসরটিতে ফাইনাল খেলতে চায় তারা। বাংলাদেশের সর্বশেষ (২০২২) ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলের অংশ থাকায় গায়ানা সম্পর্কে ধারণা আছে সোহানের। সেই অভিজ্ঞতা মনে করে রংপুর অধিনায়ক বলেন, 'আমি শেষ ওয়ানডে সিরিজ ওখানে খেলেছি, গায়ানার উইকেট ও বাংলাদেশের উইকেট কিছুটা একই। কোচ মিকি আর্থারের সঙ্গে কথা হয়েছে পুরো দলের, কী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা যেতে পারি এবং কেমন পরিস্থিতি হতে পারে, সেটার একটা ধারণা সবাই পেয়েছে। ওখানে যাওয়ার পর তিন-চার দিন অনুশীলনের সুযোগ পাব, সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।'
রংপুর ছাড়া টুর্নামেন্টের বাকি চার দল হচ্ছে ঘরের মাঠের দল গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স, পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্স, ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার হকস ও অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া। এমন কিছু দল থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্টের আশায় সোহান, 'আমার কাছে মনে হয় যে, এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য বড় সুযোগ, এমন একটা গ্লোবাল টুর্নামেন্ট হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হবে। এখানে অংশ নেওয়া, বাংলাদেশের হয়ে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি দল দেশের বাইরে যাচ্ছে, এটা আমাদের কাছে মনে হয় অনেক বড় পাওয়া।'
গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলবেন সোহান, সৌম্য সরকার, শেখ মেহদি হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আফিফে হোসেন ধ্রুব, সাইফ হাসান, রিশাদ হোসেন, আরাফাত সানি, কামরুল ইসলামরা। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেন টেইলর, হারমিত সিং, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাথু ফোর্ড, ইংল্যান্ডের ওয়েন ম্যাডসেন ও জ্যাক চ্যাপেল। সর্বশেষ বিদেশি হিসেবে রংপুর দলের ভিড়িয়েছে পাকিস্তানের খুশদিল শাহকে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য এই আসরটিকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন সোহান। একই সঙ্গে নিজেদের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়েছেন তিনি, 'এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হবে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় শেখার প্রক্রিয়া। আমরা হয়তো খুব বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই না। যেহেতু এই টুর্নামেন্ট খেলছি, এরপর এনসিএলে টি-টোয়েন্টি আছে, বিপিএল আছে। একই সঙ্গে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমরা চেষ্টা করব, আমাদের জায়গা থেকে শতভাগ ভালো কিছু করার করার। যেন ভবিষ্যতে আমাদের ক্রিকেটে ভালোর জন্য এ রকম সুযোগ আসে।'
পুরো টুর্নামেন্টই হবে গায়ানাতে, ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে। ২৬ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া আসরটির পর্দা নামবে আগামী ৭ ডিসেম্বর। সব মিলিয়ে ১০ লাখ ডলার প্রাইজমানি থাকছে আসরটিতে। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৫ লাখ ডলার, রানার্সআপরা পাবে আড়াই লাখ ডলার। প্রতিটা ম্যাচ জয়ের জন্য দেওয়া হবে ২৫ হাজার ডলার করে।