‘যুদ্ধে নামলে গুলি খেতে হয়’
মঙ্গলবার বিপিএলের ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসছিলেন রংপুর রাইডার্সের জয়ের নায়ক নাহিদ রানা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম গ্যালারির পাশ দিয়ে যখন হাঁটছিলেন, সব দর্শকের নজর তখন বাংলাদেশের এই গতি তারকার দিকে। 'নাহিদ ভাই' নাহিদ ভাই' বলে গলা ফাটাচ্ছিলেন দর্শকরা, তুলছিলেন ছবি। দর্শকের ভালোবাসায় হাত তুলে সাড়া দেন নাহিদ।
তারকা কাউকে দেখে দর্শকদের মাঝে শোরগোল পড়ে, তারকারাও সাড়া দেন; জাতীয় দলে ১০ মাসের পথচলায় তা জানা হয়ে গেছে নাহিদের। যদিও কিছুক্ষণ পরই নিজেকে সাধারণ মানুষ দাবি করলেন দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে গতিময় এই বোলার। জানালেন, নিজেকে তারকা মনে হয় না তার। একইভাবে নিজেকে সামলে রাখার প্রশ্নেও সাধারণ মানুষের মতো করে উত্তর দিলেন নাহিদ। জানালেন, যুদ্ধে নামলে গুলি খেতে হয়।
নাহিদের ব্যাপারে আলোচনা মূলত এটা নিয়েই, যা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। ঢাকা পর্বেই রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে প্রশ্ন করা হয়, নাহিদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে রংপুরকে কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা বিসিবি। সোহান জানান, বর্তমান সময়ে পেসাররা অনেক সচেতন, তারা জানেন কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আজ নাহিদও অনেকটা এমনই বললেন। সঙ্গে এও জানালেন, গতির ঝড় তুলতে হলে ঝুঁকি থাকবেই। ব্যাপারটা যেন তার কাছে খুবই স্বাভাবিক।
গতিময় বোলারদের ইনজুরির ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাহিদ প্রায় নতুন। এমন সময়ে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টসহ আরও কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়। দুই ফরম্যাটে অভিষেক হয়ে গেছে নাহিদের, হয়ে উঠছেন নিয়মিত সদস্য। বিপিএলসহ ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। রংপুরই যেমন টানা পাঁচ ম্যাচে খেলিয়েছে নাহিদকে। এই টানা খেলার কারণেই নাহিদকে ইনজুরির কথা মনে করিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
উদাহরণ হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজা, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসনদের কথা উল্লেখ করা হয়। যারা মূলত গতিতে বোলিং করতে গিয়ে নানা সময়ে ইনজুরির কবলে পড়েছেন। কিন্তু নাহিদের উত্তরে মনে হয়েছে, এটা তার কাছে ভাবনার কোনো বিষয়ই নয়। রংপুরের হয়ে পাঁচ ম্যাচে ৯ উইকেট নেওয়া ডানহাতি এই পেসার বলেন, 'প্রথমে যেটা বললেন যে, ইনজুরি। ধরেন, মানুষ যুদ্ধে নামলে গুলি খাইতে হয়।'
ক্রিকেট খেললে ইনজুরিতে পড়তে হবে, ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে দেখেন নাহিদ। সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত তিনি। তবে তার চেষ্টা থাকে ফিটনেস ঠিক রেখে যতোটা ইনজুরিমুক্তভাবে খেলা যায়। ২২ বছর বয়সী তরুণ এই পেসার বলেন, 'ক্রিকেট খেলতে এলে ইনজুরিতে পড়বো। আর যেটা মেইন্টেইন কথা বলছিলেন, ফিটনেস, এগুলো সব নিজে মেইন্টেইন করছি। আর বিসিবি যেসব সিডিউল দিয়েছে, ওগুলো মেনে কাজ করার চেষ্টা করছি। সামনে যা হবে, আলহামদুলিল্লাহ।'
জাতীয় দলের ফিজিওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় নাহিদের। রংপুর রাইডার্সের ফিজিওর সঙ্গেও কথা হয় তার। টানা ম্যাচ খেললেও সতর্ক থেকে সামনে পা ফেলছেন জানিয়ে নাহিদ বলেন, 'হ্যাঁ, অবশ্যই, জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদ ভাই আছেন, উনার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। আমাদের রংপুর দলে সজীব ভাই ফিজিও আছেন, ওনার সঙ্গে এসব নিয়ে কথা হয়। ফিজিওদের সঙ্গে কথা হয়। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো (শরীরের অবস্থা)।'
'আমি শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তারপরে গ্যাপ পেয়েছি, খেলি নাই। বিসিবির একটা নির্দেশনা ছিল যে, তোমাকে মেইন্টেইন করবে এবং পরিকল্পনা দিয়েছে যে, তুমি এভাবে ফিটনেস নিয়ে কাজ করবে এবং ম্যাচ খেলবে। এখন পর্যন্ত বিসিবি বলছে যে, আমার বোলিং ঠিক আছে এবং অনুভব করছি যে শরীর ঠিক আছে।' বলেন নাহিদ।
জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে অনেকেরই প্রশংসা কুড়িয়েছেন গতির সঙ্গে লাইল-লেংথের মিশেলে দারুণ বোলিং করে আসা নাহিদ। বিশ্ব ক্রিকেটের নামিদামি অনেকের মুখেই শোনা গেছে বাংলাদেশের এই পেসারের নাম। রংপুরের কোচ মিকি আর্থার মনে করেন, নাহিদ খুবই স্পেশাল একজন বোলা। যিনি লম্বা সময় ধরে দেশকে সার্ভিস দিতে পারবেন। রোববার সংবাদ সম্মেলনে নাহিদের প্রশংসা করেন ফরচুন বরিশালের পাকিস্তানি তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি।
গায়ে লেগেছে তারকার ট্যাগ, অনেকের মুখেই তার নাম। তবে এসবের কোনো কিছুতেই নজর নেই তার। তারকা খ্যাতি, প্রশংসা শুনে অল্পতেই সন্তুষ্ট হতে চান না আজ ঢাকার বিপক্ষে ৪ ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা নাহিদ। তবে প্রশংসা শুনতে যে ভালো লাগে, সেটাও অস্বীকার করলেন না উঠতি এই পেসার। তার ভাষায়, 'আসলে এই জিনিসগুলো থেকে আমি যতো পারি, দূরে থাকার চেষ্টা করি।'
'তবে মানুষ মানুষের প্রশংসা করলে শুনতে ভালো লাগে- আমি চেষ্টা করি, যতো পারি এগুলো থেকে দূরে থাকার। কারণ, নিজের ভেতরে যতো সন্তুষ্টি কম আসবে, ততো আমি সামনে এবং আমার ভেতরে তাড়না থাকবে পারফর্ম করার। তাই চেষ্টা করি দূরে থাকার। নিজেকে আমি কোনো তারকা মনে করছি না। আমি আপনাদের মতো সাধারণ মানুষ। তাই আমি সাধারণ থাকার চেষ্টা করছি।' যোগ করেন নাহিদ।
টানা পাঁচ ম্যাচে জিতেছে রংপুর, এমন সাফল্যের রহস্য কী? নাহিদ জানান টিম বন্ডিংয়ের কথা। জয় উপভোগ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'উপভোগ করছি। সবাই উপভোগ করছি। মাঠে, মাঠের বাইরে বলেন; আমাদের বন্ডিংটা অনেক ভালো। ওই জিনিসটা মাঠে কাজে দিচ্ছে। দল এবং কোচ যাদের যে পরিকল্পনা দেয়, সেটা মাঠের মধ্যে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। আমাদের টিম বন্ডিংটা অনেক ভালো। এটার জন্য মাঠে পারফর্ম ভালো হচ্ছে।'