ধর্ষণের বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে আলোচিত বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন, মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এক প্রতিবন্ধী চাকমা তরুণীকে ধর্ষণের পর প্রতিবাদের মধ্যেই দেশজুড়ে আলোচনায় আসে সিলেট এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া তরুণীকে ছাত্রাবাসে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা। এরপর রোববার রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে ঘরে ঢুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ধর্ষণ চেষ্টার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকেই। বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া সকল ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ।
ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও লেখক, শিল্পী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, নারী অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ গিয়ে তাদের সঙ্গে সংহতি জানান।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে 'ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা'র ব্যানারে ফের বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র ইউনিয়ন।
এরপর সেখান থেকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ঘুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।
অন্যদিকে অব্যাহত ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জসিম উদ্দিন হল ছাত্র সংসদের জিএস ইমাম হাসানের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচী শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী।
অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
দেশব্যপী অব্যাহত ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপেয়েন্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নানা স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে নোয়াখালীতে বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং তানোরের গির্জায় কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ জানানো হয় এবং দোষীদের আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, সারাদেশজুড়ে নারী ও শিশুর ওপর যে নির্যাতন নেমে এসেছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নারীরা কোথাও নিরাপদ না। এর দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ রংপুরে
ধর্ষন ও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুর মহানগরী।
আন্দোলনকারীদের দাবি, ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তা প্রকাশ্যে দেওয়া হোক।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রংপুর মহানগরীর প্রেসক্লাব, লালবাগ, কাচারীবাজার এলাকায় ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাণের শিক্ষার্থী এবং সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী কয়েকটি সংগঠন।
ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিচারহীনতা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ষণ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তা প্রকাশ্যে কার্যকর করার দাবি তাদের।
প্রেসক্লাবের সামনের মানবন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়।
কর্মসূচিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও জনতা রংপুর এর আহবাহক ডাক্তার সৈয়দ মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, রংপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৫ টি স্থানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নেতাকর্মীরা এই নির্যাতনের প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মানববন্ধন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা এই কর্মসূচি থেকে ধিক্কার জানাই যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি প্রদান করা হোক। জাতি এরকম ঘৃণ্য অপরাধকে কোনদিনও মেনে নিবে না।
রংপুর নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেত্রী ফারহানা আক্তার বলেন, যারা বেগমগঞ্জে একজন নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে তাদেরকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি প্রদান করা হোক। নইলে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা।
মাগুরায় ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
'গর্জে ওঠো, রুখে দাড়াও। ধর্ষণসহ সকল প্রকার অনাচার থেকে সমাজ বাঁচাও' এই শ্লোগানে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধসহ সকল প্রকার অনাচার বন্ধের দাবিতে মাগুরায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জেলা মহিলা পরিষদের আয়োজনে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা সারাদেশে নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ জানান এবং সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এ সকল ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নেত্রকোনায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও হত্যা বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার নেত্রকোনা জেলা সদরে মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা শাখা পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করে।
জেলা শহরের মোক্তারপাড়ার মগড়া সেতুতে সকাল ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি।
স্থানীয় জেলা প্রশাসক কাজী মোঃ আব্দুর রহমান ও পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে বেলা ১২টায় নেত্রকোনার পৌরসভার সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা শাখা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের রাজশাহী, রংপুর, মাগুরা এবং নেত্রকোনা প্রতিনিধি।