ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে ট্যানারিশ্রমিকদের আন্দোলন, মালিকপক্ষ বলছে ‘অসম্ভব’
চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সম্প্রতি ৫টি গ্রেডে সরকারের ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছে এই শিল্পের শ্রমিকরা।
আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালেও ঢাকার সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর প্রধান ফটক সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে একই দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন ও বিক্ষোভ করেছেন তারা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এছাড়া, দাবি আদায় না হলে কর্মবিরতির সময় বাড়িয়ে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে বিক্ষোভ থেকে।
অন্যদিকে, সরকার ঘোষিত এই ন্যূনতম মজুরি বর্তমান প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত নয় জানিয়েছে ট্যানারি মালিকদের ১৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত লেদার ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এলআইডিসি) ।
কমিটির সভাপতি মজিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'এটি [ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি] বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে যাবে। এটি করতে গেলে সব ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাবে। এমনিতেও ৯৫ শতাংশ ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে।'
তিনি বলেন, 'যেভাবে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এভাবে ট্যানারি সব বন্ধ হয়ে যাবে। ন্যূনতম মজুরি ঠিক হয়নি। আগে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সময় আমরা ট্যানারির মালিক, শ্রমিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এটি ঠিক করতাম। কিন্তু এবার সব এলোমেলো হয়ে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'কয়েকদিন আগে আমরা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। কিন্তু মিটিং চলাকালীন আমাদের একজন মালিক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এটি শেষ করা যায়নি। আগামী রবিবার আমরা আবারও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।'
অন্যদিকে, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক টিবিএসকে বলেন, 'গত ২১ নভেম্বর সরকার গেজেট চূড়ান্ত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী সেদিন থেকেই এটি কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু মালিকরা বাস্তবায়ন করছে না, তারা নানা তালবাহানা করছে, না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সর্বশেষ আমাদের শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে তিন বছর আগে। এই তিন বছরে তো জিনিসপত্রের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের দাবি ছিল ২৫ হাজার টাকা। মালিকপক্ষ দফায় দফায় আলোচনার পর ১৮ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে। এটি তাদের প্রস্তাব। তাহলে এখন কেন তালবাহানা? বোর্ডে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগে মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হতো, সেখানে উল্লেখ থাকতো যে পর্যায়ক্রমে তারা [মালিকপক্ষ] ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সেটি তারা কোনোদিন বাস্তবায়ন করেনি। এখন আমরা আর কোনো চুক্তিতে যাব না। চুক্তি হলে অন্যান্য বিষয় নিয়ে হতে পারে, কিন্তু ন্যূনতম মজুরির প্রশ্নে এর কমে আমরা কোনো চুক্তিতে যাব না।'
এর আগে আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি দিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে কর্মবিরতি পালন ও বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
বিক্ষোভ থেকে ঝর্ণা নামের একজন নারী শ্রমিক বলেন, 'সরকার আমাদের জন্য মোট পাঁচটি গ্রেডে মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে, কিন্তু মালিকপক্ষ এখনও এই মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে আমি মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতন পাই, এই বেতনে কি সংসার চলে?'
বিক্ষোভ থেকে আজ শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ছাড়াও আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো-
শ্রম আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন; প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান, স্থায়ী কাজে অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা; মধ্যস্বত্বভোগী বা ঠিকাদারের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা; শিল্প নগরীতে একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চালু করা; শ্রমিকদের জন্য স্বল্পমূল্যের ক্যান্টিন ও আবাসন ব্যবস্থা চালু করা; আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমিকদের অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা; ট্যানারি শিল্পে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর ও সামাজিক সম্মতি (সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স) নিশ্চিত করা।