ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বিক্ষোভ
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন রিকশাচালকেরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ।
হাইকোর্টের নির্দেশে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়ক থেকে সরানোর প্রতিবাদে আজ সকালে বনানী থেকে মহাখালী রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। ফলে ওই এলাকার পুরো যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাসেল জানান, সকাল ৯টার দিকে মহাখালী মোড়ে রিকশাচালকরা রাস্তায় নেমে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে তারা মহাখালী রেলক্রসিং অবরোধ করলে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
রেলক্রসিং বন্ধ করায় সকাল থেকে সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। তবে দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দিলে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তারা। তবে কয়েকবার ধাওয়া পালটা ধাওয়ার পর আবার সেখানে বিক্ষুব্ধ রিকশাচালকেরা অবস্থান নিয়েছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শিয়া মসজিদ মোড়, কল্যাণপুর, রামপুরা, টেকনিক্যাল, পল্লবী, ডেমরা, ঢাকা উদ্যান, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকায়ও অটোরিকশার চালকেরা যান চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সড়ক বন্ধ থাকায় পুরো শহর কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থবির হয়ে যায়। ফলে সকাল বেলায় অফিসগামী মানুষ বেশ ভোগান্তিতে পড়েন এবং অনেকেই যানবাহন থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন।
যানজটে বিরক্ত সাদিয়া সুচিতা ক্ষোভ প্রকাশ করে টিবিএসকে বলেন, 'কী হচ্ছে এসব। গুলশান থেকে বসুন্ধরা যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলাম, কিন্তু এখনও দুই ঘণ্টা ধরে জ্যামে আটকে আছি। এটা আসলেই বিরক্তিকর।'
সড়কে রিকশা চালানোর দাবিতে আগারগাঁও এলাকায়ও বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে চালকদের। শেরে বাংলা নগর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার উদয়ন কুমার জানান, সকাল ১০টা থেকে মহাখালী এবং আগারগাঁও এলাকায় শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক হাইকোর্টের অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার আদেশ বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। প্রতিবাদকারীরা সড়কে অবস্থান করায় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ আছে।
রামপুরায় দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রিকশাচালকরা সড়ক ছেড়ে চলে যান। এসময় স্থানীয় ও পথচারীদেরও তাদের তাড়া দিতে দেখা যায়। এর কিছু সময়ের মধ্যেই ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার তানিয়া জানান, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মিরপুর-১০, কালশী, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা মিছিল বের করেছেন। পরে তারা মিরপুর-১০ গোলচত্বর ও রোকেয়া সরণি এলাকায় জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। মিরপুর-১০, কালশী, মিরপুর-১১ এখনও অবরুদ্ধ, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে হিমশিম খাচ্ছে সেনাবাহিনী।
মিরপুরের বাসিন্দা ইকবাল মাহমুদ বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় বিক্ষোভের কারণে রাস্তায় যানবাহন না থাকায় পায়ে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়েছে।
একটি নিয়োগ সংস্থার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কাদের হেলাল জানান, তার এক কর্মচারী সৌদি আরব যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও সময়মতো বিমান ধরতে পারেননি। তিনি বলেন, 'কিছু মানুষের প্রতিবাদের কারণে তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে, সে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। এটা আর সহ্য করা উচিত নয়।'
প্রসঙ্গত, গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা মহানগরে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এর আগে বুধবারও (২০ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রিকশা চলাচল করছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই ব্যাটারিচালিত। অনেক পুরোনো পায়ে চালিত (প্যাডেল) রিকশাকে ব্যাটারি দিয়ে মোটরচালিত রিকশায় রূপান্তর করা হচ্ছে।