পেঁয়াজের দাম কমলেও বেড়েছে আলুর; অপরিবর্তিত আছে মাছ, মাংস, সবজির দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০–৮০ টাকা হয়েছে। যদিও পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১০–২০ টাকা পর্যন্ত। অপরদিকে সবজি, মাছ ও মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলুর মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজারে আলুর সরবরাহ খুবই কম। হিমাগার পর্যায়েই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় আলু আমদানিও করছেন না ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে, ভারত থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমেছে এই নিত্যপণ্যের।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর শাহজাদপুর, রামপুরা, কারওয়ান বাজার ও কল্যাণপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়— মানভেদে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০–৮০ টাকা। যদিও গত সপ্তাহে প্রতিকেজি আলু পাওয়া গেছে ৬৫–৭০ টাকায়। একইসঙ্গে পাইকারি বাজারেও আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। আলুর সরবরাহ না থাকায় ব্যাবসায়ীদের আশঙ্কা, সামনে এ নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
কারওয়ানবাজারের আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি আলু ৬৩–৬৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজ গেটে এখন দাম ৬১ টাকা ৫০ পয়সা। আলুর সরবরাহ অনেক কম, কারণ মৌসুম শেষ। এখন নতুন আলু বাজারে ভালোভাবে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই; বরং আরও বাড়তে পারে।"
চলতি বছর মৌসুমের শুরু থেকেই আলুর দাম বেড়েছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে আলু বাজারে আসে। তবে এ বছর এপ্রিলেই প্রতিকেজি আলুর দাম ৫৫–৬০ টাকায় ওঠে। এরপর থেকে আলুর দাম আর কমেনি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষকের হাত থেকে আলু কয়েক হাত বদল হয়ে হিমাগারে ঢোকে। এখানেই আলুর দাম চলতি বছর ২০–২৫ টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে— যার প্রভাব সারাবছর বাজারে ছিল।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সেন্ট্রাল কমিটির সহ–সভাপতি এসএম নাজের হোসেন টিবিএসকে বলেন, প্রতিবছরই মৌসুমের শেষ দিকে আলুর দাম বাড়ে। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
তিনি বলেন, "কৃষক থেকে আলু এজেন্ট বা ফড়িয়া হয়ে কয়েক হাত ঘুরে হিমাগারে যায়। কৃষক সরাসরি রাখতে পারেন না, সিস্টেমটাই এমন। ফলে হিমাগার মালিকরা সরাসরি যুক্ত না থেকে ফড়িয়াদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে এ বছর আলুর দাম শুরুতেই বাড়িয়েছিল। এটা কিন্তু ভোক্তারা সারাবছর ভোগ করেছেন।"
"এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আগের সিস্টেম থাকলে তো এর সুফল পাওয়া যাবে না। আলু চাষীদের সরাসরি ঋণ দিতে হবে। তারা বাধ্য হয়ে বড় ব্যবসায়ীদের থেকে দাদন নিয়ে আলু চাষ করে। আর এর মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করে বড় ব্যবসায়ীরা। আর সরকারি উদ্যোগে কিছু কোল্ড স্টোরেজ রাখতে হবে সারাদেশে। তাহলে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা এমন লুট করার সুযোগ পাবে না," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০–১৩০ টাকায়। আর আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০–১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ১৪০–১৫০ টাকা এবং আমদানি হওয়া পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। একইসঙ্গে, পাইকারিতে প্রতিকেজির দাম ১০–২০ টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি ঠিক থাকলে এ মৌসুমে আর দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল মিয়া টিবিএসকে বলেন, পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। ভারতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে আসায় দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ টাকা কমেছে। এখন আর আশা করি, দাম বাড়বে না।
এদিকে, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। প্রতিকেজি বেগুন ৮০–১২০ টাকা, মুলা ৫০–৬০ টাকা, শালগম ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০–৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০–৮০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিপিস ৫০–৬০ টাকা এবং লাউ ৬০–৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ–মাংসের দামও। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৮০–১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩১০ টাকায়। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০–৮০০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,০০০–১,১৫০ টাকায়।
ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি রুই ও কাঁতল মাছ মানভেদে ৩২০–৪০০ টাকা, চাষের কই ২৫০-২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০–২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০–২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।