সরকার পরিবর্তনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক পালিয়েছেন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সরকার পরিবর্তনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক পদত্যাগ করেছেন বা পালিয়েছেন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, যারা আকস্মিক পদত্যাগ করেছেন, তারা সম্ভাব্য অব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি বলেন, 'সরকার পরিবর্তনের পর তারা চলে গেছেন। নিশ্চিতভাবেই, তারা ব্যাপক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং সে কারণেই তারা পালিয়ে গেছেন।'
চলমান প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রচেষ্টা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মাতারবাড়ি প্রকল্পের পরিচালক সরকারি সম্পত্তি বিক্রির পর উধাও হওয়ার জ্বলন্ত উদাহরণও তুলে ধরেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন পরিচালক নিয়োগ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এই প্রক্রিয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হওয়ায় অগ্রগতি ধীর হয় বলেও ব্যাখ্যা করেন তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা জোর দেন যে, এই পদত্যাগগুলোর অনেকগুলো ব্যক্তিগত দুর্নীতির মূলে ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এসব প্রকল্প পরিচালকরা নিজেদের অপকর্মের কারণে পালিয়ে গেছেন। এর সঙ্গে আর কোনো যোগসূত্র নেই।'
অন্তর্বর্তী সরকার এই জাতীয় বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে নতুন নিয়োগগুলো যাচাই-বাছাই করছে। ড. ওয়াহিদউদ্দিন দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, নবনিযুক্ত প্রকল্প পরিচালকরা ভবিষ্যতে সরকারের অধীনেও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, 'আমরা সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে আমাদের নিয়োগপ্রাপ্তরা পালিয়ে যাবেন না।'
সরকার বর্তমান অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন বাজেটের পুনরায় আকার দিচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শুরু করা প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাইয়ের করা হচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাতিলও করা হয়েছে।
প্রকল্প বাতিল করার অন্তর্বর্তীন সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে তিনি বলেন, 'এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলো রাজনৈতিকভাবে নেওয়া হয়েছিল এবং আমরা বিশ্বাস করি না যে এগুলো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।'
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুর্নীতিমুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ জবাবদিহিতা নিতে হবে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন উল্লেখ করেন, কিছু মন্ত্রণালয় এখনো স্থিতিশীল ভিত্তি অর্জন করতে পারেনি। 'ফলে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু হয়নি।'
উন্নয়ন ব্যয়-বিনিয়োগ স্থবিরতায় অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন কোনো বেসরকারি বিনিয়োগ না থাকা এবং প্রায় স্থবির সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ের কারণে দেশ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, 'একদিকে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করছেন না, অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো যাচ্ছে না। এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করবে।'
উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না এবং সুদের হার অনেক বাড়ানো হয়েছে। 'ফলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনো আগ্রহী হচ্ছেন না।'
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া প্রকল্পগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে এই অর্থবছর শেষ পর্যন্ত। তিনি বলেন, 'প্রকল্পগুলো ভালো হলে এবং নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হলেও আমরা নীতিগত সমন্বয়ের পর্যায়ে আছি।'
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'এর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করতে পারব। এটি জরুরি, কারণ অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শৃঙ্খলাহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থবির পরিস্থিতি বিরাজ করছে।'
অপচয়, দুর্নীতি ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বন্ধ করতে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, 'এটা সত্য যে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে চলছে।'
তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার আগে প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নির্বাচনি এলাকার জন্য যেকোনো সময় নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করা রাজনৈতিক সরকারের জন্য ভালো সুযোগ।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, 'তবে আমাদের কোনো নির্বাচনি এলাকা নেই, আমাদের সময় কম এবং অবশ্যই আমাদের সেরকম কোনো প্রবণতা নেই, এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।'
তিনি উল্লেখ করেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা উন্নয়নে কিছু উদ্ভাবনী, নতুন মাত্রার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে আলোচনার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ আবার বসবে।
মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবির পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন। '
এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই,' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি কর্মসংস্থানের স্বার্থে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন গতিশীল হবে, তেমনি নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অর্থনীতি সচল হবে।
খুব শিগগিরই নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হবে বলেও নিজেদের ভাবনার কথা জানান তিনি।