জুলাই–অক্টোবরে বিদেশি ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৩ শতাংশ
উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩ শতাংশ কমেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীরা জুলাই-অক্টোবর সময়ে মাত্র ২৫৪.৫৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৩.৬২৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক কম।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সরকার বিদেশি ঋণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করছে, যার ফলে নতুন ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ায় ঋণ প্রতিশ্রুতি হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের সময় নেওয়া কিছু বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ শুরু করেছে, ফলে উন্নয়ন সহায়তার ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।
তবে কর্মকর্তারা আরও বলেন, পর্যালোচনার পর ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং সরকার আশাবাদী লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করা যাবে।
তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-সহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ঋণ সহায়তা ও বাজেট সহায়তার প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থার থেকে অনেক দূরে। এ কারণে বিদেশি ঋণের সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না।'
তিনি ব্যাখ্যা করেন, 'সরকার বিদেশি ঋণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনাগুলোও পর্যালোচনা করছে, যার ফলে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি হ্রাস পেয়েছে। তবে, বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা তাদের প্রকল্প ঋণ এবং বাজেট সহায়তা প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন।'
ঋণ ছাড়ের চেয়ে পরিশোধ বেশি
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ উন্নয়ন সহযোগীদের বিতরণ করা পরিমাণকে অতিক্রম করেছে।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশ ১.২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে, যেখানে একই সময়ে ঋণের মূল এবং সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১.৪৩৭ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, বিদেশি তহবিল ছাড় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমে ১.৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। মূলত পদ্মা রেল লিঙ্ক প্রকল্পের জন্য চীনের ঋণের মূল পরিশোধ বাড়িয়েছে সরকার।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই-অক্টোবর মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৩০.৫ শতাংশ বেড়েছে। আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ ১.১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিল, যেখানে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪৩৭ বিলিয়ন ডলারে।
ঋণের মূল পরিশোধে ৪১.২ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৬৩৪.১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৮৯৫.৫৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।
একই সময়ে সুদ পরিশোধও বেড়েছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৫৪২.৩২ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করেছে সরকার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৬৭.৪২ মিলিয়ন ডলার।
জুলাইয়ে উন্নয়ন অংশীদারদের ছাড়কৃত ঋণ
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, জাপান জুলাই-অক্টোবর সময়কালে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য ছাড় করেছে।
দেশটির ছাড় করা অর্থের পরিমাণ ২৬৬.৩০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর পরেই রয়েছে এডিবি।
এডিবি ২৬৬.১১ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ১৪৯.৫৩ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ১৭৮.১৬ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৬৩.৮৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা ছাড় করেছে।
এ সময়ের মধ্যে চীন কোনো তহবিল দেয়নি বাংলাদেশকে।