চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে সোমবার (২ ডিসেম্বর) মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ ভারতীয়। বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও অন্যান্য ডানপন্থী গোষ্ঠীর সদস্যরাও।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাষ্ট্রদোহিতার এক মামলায় আটক করে।
ধর্মীয় নেতা ও কর্মীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের 'লক্ষ্য করে হামলা' চালানো হচ্ছে। বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বিধায়ক (এমএলএ) ও প্রাক্তন মন্ত্রী মঙ্গল প্রভাত লোধা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ২০০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু হিন্দুরা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ।
ভিএইচপির জাতীয় মুখপাত্র শ্রীরাজ নায়ার দ্য হিন্দুকে বলেন, 'বিক্ষোভে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে সাধু এবং সাধারণ মানুষও রয়েছেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানকার সরকারকে অবশ্যই তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।'
বিক্ষোভ শেষে ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেপ্তারকে 'ধর্মীয় ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন' বলে উল্লেখ করা হয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, 'এ গ্রেপ্তারের ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা, বাকস্বাধীনতা ও ধর্মচর্চার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হিন্দু পরিবার, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নারী ও শিশুদের ওপর হামলা যেকোনো সভ্য সমাজে অগ্রহণযোগ্য। সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা অবাধে চলাফেরা করছে।'
ভিএইচপি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং প্রতিহিংসাপ্রসূত বলে অভিহিত করে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, 'শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, জনসমাবেশ এবং ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনকে কোনোভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।'
মুম্বাই বিজেপির সহ-সভাপতি ও শ্রী সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ আচার্য পবন ত্রিপাঠী বলেন, 'বাংলাদেশে ধর্মীয় চরমপন্থীদের অবাধ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আর সংখ্যালঘু নেতারা অন্যায়ভাবে আটক হচ্ছেন, যা দুর্ভাগ্যজনক।। আমরা তাদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানাই।'
এদিকে সোমবার ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ ও হামলা চালিয়েছে হিন্দু সংগ্রাম পরিষদ নামক একটি ডানপন্থী সংগঠন।
এ ঘটনায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে এ বিক্ষোভ ও হামলাকে 'পূর্বপরিকল্পিত' উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে ভারতকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।