নিজের দলের নেতাকেও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল গত মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন জারির পর তার নিজের দলের নেতা হান ডং-হুনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। খবর বিবিসির
দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের তালিকায় হান ডং-হুন ছাড়াও প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জে-মিয়ুং এবং তিন বিরোধী আইনপ্রণেতাও রয়েছেন।
ডিরেক্টর হং জাং-উন বলেন, প্রেসিডেন্ট এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো দিনভর জরুরি বৈঠক করেছেন। তারা আগামীকাল শনিবার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোটাভুটির সময়সূচি নির্ধারণ করেছে। দুই-তৃতীয়াংশ এমপি এর পক্ষে ভোট দিলে প্রস্তাবটি পাস হবে।
৩০০ আসনের পার্লামেন্টে বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, অভিশংসন প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজনীয় ২০০ ভোট নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দলের অন্তত ৮ জন এমপির সমর্থন প্রয়োজন।
এদিকে, শুক্রবার ইউনের ক্ষমতাসীন দলের নেতাও তাকে দ্রুত অভিশংসনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্রের জন্য 'বড় বিপদ' আসবে।
পিপলস পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) প্রধান হান ডং-হুন চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, তার দল বিরোধীদের অভিশংসন প্রস্তাবে সমর্থন দেবে না।
তবে শুক্রবার তিনি জানান, গত মঙ্গলবার 'দেশবিরোধী কাজের অভিযোগে' ইউন তাকেসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে 'বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' রয়েছে।
হান বলেন, ইউন সুক-ইওল মূলত দক্ষিণ সিউলের গাওচিওন এলাকায় কিছু রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার ও আটক করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইউন ক্ষমতায় থাকলে সামরিক আইন ঘোষণার মতো 'চরম সিদ্ধান্তের' পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
তিনি বলেন, '[এসব পদক্ষেপ] কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং এর জনগণকে বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।'
এর আগে স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার কোয়াক জং-কুয়েন পার্লামেন্টকে আশ্বস্ত করেছেন, যদি আবার সামরিক আইন জারি করা হয়, তাহলে তিনি এ ধরনের আদেশ মানবেন না।
মঙ্গলবার রাতে কোয়াক বলেন, সামরিক আইন ঘোষণার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য আসা সংসদ সদস্যদের সমাবেশ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আদেশ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ইউনের সামরিক আইন জারির প্রচেষ্টা দেশটির জনগণকে রীতিমতো হতবাক করেছে।
তিনি 'রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি' ও উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করে সামরিক আইন জারি করেন।
তবে খুব শিগগিরই প্রকাশ পায় যে তার এই পদক্ষেপ কোনো বহিরাগত হুমকির কারণে নয়, বরং তার নিজস্ব রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা।
তার ঘোষণার পর দেশটির ১৯০ জন এমপি পার্লামেন্টে ঢুকে এটি বাতিলের পক্ষে ভোট দেন, এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এর আগে তাদের কেউ কেউ বিবিসিকে বলেছিলেন, তারা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মাঠের কাছাকাছি অবস্থান করছেন, যাতে এ ধরনের কোনো ঘোষণা হলে তারা দ্রুত ভোটাভুটি করে তা বাতিল করতে পারেন।
রাজধানী সিউলে ইউনের পদত্যাগের দাবিতে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে রাস্তায় বিক্ষোভ চলছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জনগণ পিপিপি'র আইনপ্রণেতাদের টেক্সট ম্যাসেজে ইয়ুনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
চোসুন ডেইলি জানিয়েছে, শিন সাং-বুম নামের এক এমপি ফেসবুকে এ ধরনের চার হাজারের বেশি বার্তা পেয়েছেন।
চো কিউং-তাই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের প্রথম এমপি, যিনি প্রকাশ্যে ইয়ুনের অভিশংসনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
শুক্রবার চো বলেন, 'প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো বা সামরিক আইন জারি করা বাহিনীর মিত্র হওয়ার মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনীতিবিদদের। আশা করি, গণশক্তির পক্ষের সকল রাজনীতিবিদ জনগণের পাশে দাঁড়াবেন।'
বৃহস্পতিবার স্থানীয় জরিপকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েলমিটারের এক জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজনই প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
বুধবার ভোরে সামরিক আইন জারির আদেশ প্রত্যাহারের পর থেকে ইয়ুনকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি বা তিনি কোথাও বক্তব্য দেননি।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি