আলিফ খুনের আসামিদের পক্ষে দাঁড়াব না, তবে বাইরের আইনজীবী পারবেন: জেলা আইনজীবী সমিতি
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ঘোষণা করেছে, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে আদালতের নিযুক্ত আইনজীবী বা অন্য জেলার আইনজীবীদের অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই।
সোমার (৯ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, '[তবে] আমরা আমাদের [সমিতির] সদস্যদের এ মামলাটি না নেওয়ার অনুরোধ করেছি, কারণ এমনটা হলে সেটি হবে আমাদের সহকর্মী আলিফের রক্তের সঙ্গে বেইমানির শামিল।'
তিনি আরও বলেন, 'তবে চট্টগ্রামের বাইরের আইনজীবী বা আদালতে নিযুক্ত অ্যাটর্নিরা আসামিদের পক্ষে লড়লে আমাদের আপত্তি নেই।'
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। খুনের ঘটনার সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চিন্ময়ের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনাটি জাতীয় ক্ষোভের জন্ম দেয়। জানা যায়, আলিফকে বিক্ষোভকারী জনতার একাংশ কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে, যার দৃশ্য ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে।
এ হত্যাকাণ্ডের পর আইনজীবীরা কর্মবিরতি শুরু করেন এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আলিফের পরিবার এবং স্থানীয় আইনজীবীরা চিন্ময় ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে হত্যা, ভাঙচুর ও সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেন।
এদিকে চিন্ময়ের ডিফেন্স অ্যাটর্নি অ্যাডভোকেট সুভাষ শারমনসহ প্রায় ৭০ জন আইনজীবীকে ২৬ নভেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এতে কিছু আইনজীবীর মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
অনেক আইনজীবী গ্রেফতার বা হয়রানির ভয়ে আদালতে যাওয়া এড়িয়ে চলছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, 'আইনজীবীদের হুমকি দেওয়ার বা আদালতে উপস্থিত হতে বাধা দেওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। যারা আদালতে যাচ্ছেন না, তারা হয়তো ব্যক্তিগত কারণে তা করছেন।'
আইনজীবী সমিতি অভিযুক্তদের প্রতিনিধিত্ব না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও এটি জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত অভিযুক্তের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ নয়।
অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, 'খুনের মামলায় আদালত প্রয়োজনে একজন ডিফেন্স অ্যাটর্নি নিয়োগ করতে পারেন। আমরা শুধু আমাদের সদস্যদের অনুরোধ করেছি, আলিফের প্রতি সম্মান জানিয়ে অভিযুক্তদের পক্ষে না দাঁড়াতে।'
বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, 'আমরা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'
২৫ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রেফতারের পর সমর্থকরা সহিংস বিক্ষোভে জড়িত হন এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।