শেখ হাসিনার অনেক গুমের সহযোগী ভারত: রিজভীর
ভারত শেখ হাসিনার অনেক গুমের সহযোগী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও বিরোধী দল শূন্য করার ক্ষেত্রে ভারতের দায় অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তারা তাদের লোককে রক্ষা করতে গিয়ে অনেক কিছুই করেছে। সুতরাং, শেখ হাসিনার অনেক গুমের সহযোগী হচ্ছে ভারতের কর্তৃপক্ষ। এটা অস্বীকার করা যাবে না।'
আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা দল।
এসময় বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'গুম কমিশনের কাছ থেকে তথ্য পাচ্ছি, অনেক গুমের সহযোগী ছিল ভারত। আজকে অনেক লোক ভারত ছাড়ছে। এদের ব্যাপারে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। এরা কি গুম ছিল ভারতে? তাহলে নিশ্চয়ই ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম সাইফুল ইসলাম হিরু, জাকির, সুমন এখনও আছেন।'
ভারত থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে আসাকে একটা বিরাট ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যে গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল, প্রমাণ তো আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে তিনি দুই মাস গুম ছিলেন, তারপরে তাকে পাওয়া গেল ভারতে। বন্ধুত্ব-প্রেম, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা এত নিবিড় ছিল যে শেখ হাসিনার অনেক অপকর্মের দায় ভারত নিজেই নিয়েছে।'
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন সবাইকে নিয়ে আপনারা কাজ করুন। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ কিন্তু বসে নেই। তারা একটার পর একটা দাবার চাল দিতে থাকবে। এই দাবার চাল যদি কেউ বুঝতে না পারে, তখন কিন্তু দেশের অনেক ক্ষতি হবে।'
দেশবিরোধী কত কাজ যে শেখ হাসিনা করেছেন তার হিসেব নেই বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি অন্তবর্তী সরকার যা করবে, তা শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা বার বার বলছি, এখন ডানে-বামে কোথাও গেলে আগের মতো ভয় লাগে না। কোনো মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে কি না এটি আগে দেখতাম। এই যে ভীতির একটা পরিবেশ, আতঙ্ক-ভয়ের শিহরণ, এখান থেকে তো আমরা কিছুটা মুক্তি পেয়েছি।'
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কিছু কিছু উপদেষ্টা বলেন যে নির্বাচন নিয়ে এত তাড়া কিসের? এত তাড়া তো নেই। শেখ হাসিনা অনেক লম্বা করেছেন, ১৫ বছর লাগিয়েছেন। আপনারাও যদি তাদের সঙ্গে আরও অনেক বছর যোগ করতে চান তাহলে তো জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে, পার্থক্য কোথায়?'
সংস্কার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, 'সংস্কার তো কোনো বিষয় না, এটি একটি ছোট্ট ঘটনা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে আদেশ দিবেন, সেটি যদি প্রশাসন না করে এটাই তো সংস্কার। এর চেয়ে বড় কোনো সংস্কার আর হয় না। অর্থাৎ ওই আদর্শ যদি আইনসঙ্গত না হয় ডিসি, এসপি, প্রশাসনিক লোক যদি সেই আদেশকে না বলে, এটাই সংস্কার। এর চেয়ে বড় কোনো সংস্কার হয় না। কোনো প্রধানমন্ত্রী যদি বিচারককে অবৈধ নির্দেশ দেন, অমুককে জেলে ভরুন, অমুককে সাজা দিন। এই আদেশে যদি বিচারক 'না' বলেন, এটাই তো সংস্কার, এর চেয়ে সংস্কার আর কি হতে পারে?'
তিনি বলেন, 'আইনের শাসন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যদি নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে একটা পরিবেশ তৈরি করুন। যে পরিবেশে বিচারকরা নির্বাহী বিভাগের অন্যায় আদেশকে 'না' বলতে পারে। এই একটি শব্দের ভিতরেই শত সংস্কার বিদ্ধ আছে। যেটা শেখ হাসিনার আমলে সম্ভব হয়নি।'
উপদেষ্টারা বড় বড় কথা বলছেন, আমরা কিছু বললে ছবক দিচ্ছেন- এমনটা জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'সাড়ে চার মাসের মতো প্রায় সময় গেল। প্রশাসনের অবস্থা এখনো ঠিক হয়নি। গেল কয়েকদিনে রাজধানীতে ৯ জনকে ছুরিকাঘাতে খুন করেছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে গেছে। তাহলে কি প্রশাসনের মধ্যে আপনারা কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারছেন না।'