দিল্লি কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার দাবিতে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিতভাবে ভারতের কাছে ক্ষমতাচ্যুত এ প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবাসনের অনুরোধ জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ দিন গণমাধ্যমকে জানান, ভারত সরকারকে একটি 'নোট ভারবাল' (আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চিঠি) পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের এ অনুরোধের পর ভারত সম্ভাব্য কী পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে তাদের মতামত জানতে চেয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবির বলেন, নোট ভারবাল মানে হলো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে অনুরোধ করেছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য।
'এখন ভারত হয়তো এর জবাব দিতে পারে,' তিনি বলেন।
তবে, চিঠিতে অবশ্যই প্রত্যর্পণ চুক্তির কোন ধারায় তাকে [হাসিনা] ফেরত চাওয়া হয়েছে তা উল্লেখ থাকতে হবে বলে জানান তিনি।
'চুক্তিতে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ভারতকে [ফেরত পাঠাতে] বাধ্য করতে পারে। তবে এমন শর্তও আছে, যেগুলোর কারণে ভারত [পাঠাতে] বাধ্য নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক বিবেচনায় যদি কাউকে চাওয়া হয়, বা বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা না থাকে কিংবা অপরাধের অভিযোগ ছোট হলে, তাহলে অনুরোধ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দেশ বাধ্য নয়। এখন দেখার বিষয় হলো, শেখ হাসিনাকে কোন ধারায় বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান বলেন, 'কূটনীতিতে নোট ভারবালের অর্থ হলো ভদ্রভাবে অনুরোধ করা।'
'ভারত যদি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, তবে তারা অনুরোধে সাড়া দিতে বাধ্য। কিন্তু যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড্রামাটিক [নাটকীয়] কোনো সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে তারা এ অনুরোধে সাড়া দেবে বলে আমার মনে হয় না।'
তিনি আরও বলেন, ভারত হয়তো যুক্তি দিতে পারে যে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে [হাসিনা] ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
তবে এ যুক্তি দুর্বল, কারণ তারা ইতোমধ্যেই তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। 'এটি আসলে অনেকটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যে তারা হাসিনাকে ফেরত দেবে কি না।'
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা হয়েছে।
১২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় ইন্টারপোলের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে আন্দোলনের সময় হত্যা, জেনাসাইড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও প্রত্যাবাসনে সহায়তার জন্য রেড নোটিশ জারি করার অনুরোধ করা হয়।
১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে সংঘটিত সব অপরাধের বিচার হবে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।