উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে ১,৬৮০ সরকারি কর্মকর্তার তথ্য যাচাই চলছে
উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার এবং সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ১ হাজার ৬৮০ জন কর্মকর্তার তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
উপসচিব পদে পদোন্নতির নীতিমালা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার এবং ২৫টি অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হলো।
সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকে প্রার্থীদের মূল্যায়ন শুরু করেছে। পদোন্নতি চূড়ান্ত করে জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুর মধ্যে তা ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে আলোচনা করতে এসএসবি সোমবার প্রথম বৈঠক করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই কর্মকর্তার মতে, তিনটি স্তরে পদোন্নতির জন্য ১ হাজার ৬৮০ জন কর্মকর্তার তথ্য যাচাই চলছে।
তিনি বলেছেন, "তবে উপসচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।" তিনি আরও জানান, "চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সার্বিক পরিস্থিতি দেখে নেওয়া হবে।"
যোগ্যতা ও মূল্যায়ন
বর্তমানে ১,৫৯৮ জন উপসচিব, ৮৬২ জন যুগ্মসচিব এবং ৪৫২ জন অতিরিক্ত সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, স্থায়ী অনুমোদিত পদ রয়েছে যথাক্রমে ১,৭৫০, ৫০২ এবং ২১২টি।
অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ের জন্য সরকার সুপারনিউমারারি পদ তৈরি করে। এই পদ্ধতি সাধারণত পুলিশ ক্যাডারের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়, অন্য ক্যাডারে এটি কম।
উচ্চতর পদে পদোন্নতির জন্য ৮১৯ জন সিনিয়র সহকারী সচিব, ৫৭৩ জন উপসচিব এবং ২৮৮ জন যুগ্মসচিবকে যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার বিস্তারিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের চাকরির রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আসন্ন পদোন্নতির জন্য ৩০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপসচিব পদের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ব্যাচ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৭ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ জন পদোন্নতির প্রতিযোগিতায় আছেন।
এছাড়া, আগে উপেক্ষিত ৩১৯ জন কর্মকর্তা এ পদের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন।
চলতি বছরে উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে নিয়মিত পদোন্নতির জন্য ২৪তম বিসিএস ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ব্যাচ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের ৩৩৬ জনের মধ্যে ৩২৯ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ২৪৪ জন, যাদের মধ্যে আগে উপেক্ষিতরাও রয়েছেন, পদোন্নতির জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২০তম বিসিএস ব্যাচের ২৮৮ জন কর্মকর্তা যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল জানিয়েছেন, পদোন্নতিতে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে কমিটির সুপারিশ মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "১১৯ জন সচিব এবং ৪১ জন গ্রেড-১ কর্মকর্তাসহ কয়েকটি পদে পদোন্নতির সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারকে এককালীন ৪২ কোটি টাকা এবং প্রতি বছর পেনশনের জন্য ৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হতে পারে।"
তিনি আরও জানান, পদোন্নতিতে বঞ্চিত ৭৬৪ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পূর্ববর্তী তারিখ থেকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চলমান বিরোধ
বর্তমানে সিভিল সার্ভিসে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশন এই কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেয়।
কমিশনের প্রধান ১৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন, উপসচিব পদে ৫০ শতাংশ পদ প্রশাসন ক্যাডার এবং ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য ক্যাডার থেকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হবে।
এই ঘোষণার পর থেকেই প্রশাসন ক্যাডার এবং অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।
গতকাল ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এক ঘণ্টার কলম বিরতি পালন করেন। তারা আগামীতে মানববন্ধন ও কেন্দ্রীয় সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা করেছেন।
তাদের দাবি, উপসচিব পদে কোটাভিত্তিক নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে। তারা কোটাভিত্তিক পদোন্নতি পদ্ধতি বাতিল করার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন 'বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন' রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
সেখানে তারা ১৫ দফা দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে উপসচিব পদে শতভাগ পদ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষণ এবং তাদের জন্য আলাদা "বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিস" প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল।
তবে অন্যান্য প্রশাসনিক পদে পদোন্নতি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।