আওয়ামী লীগ আমলের বিদ্যুৎ-জ্বালানির চুক্তিগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি বিএনপির
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ দাবি জানান।
'গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার' শীর্ষক বিশ্লেষণ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন চার দলীয় জোট সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টুকু।
তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎখাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিল, ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। আপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুতে বিল পরিশোধ করেন, সবাই ভুক্তভোগী। আসলে তারা এটা একটা ব্যবসার খাত বানিয়ে ছিল। তারা বুঝেছিল যে, এই খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো- হিসাব না দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ তো 'হাওয়া', এটা দেখা যায় না।"
টুকু বলেন, 'আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, বিদ্যুৎখাতের প্রত্যেকটা চুক্তি প্রকাশ করুন। তারা তো কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানেনি। আইন করে, নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।'
বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে টুকু বলেন, 'বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে সেটা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।'
তিনি বলেন, '২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে। তার অর্থ হলো, বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলেনি এবং এই টাকাগুলো তাদেরকে পেমেন্ট করেছে। এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে লুট করে দিয়ে গেছে।'
সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, 'ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মেশিন খারাপ। খারাপ মেশিন এনে টাকা কামাই করে চলে গেছে।'
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এই লুটপাটের অংশ কারা ছিল? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এ্যাগ্ররো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।'
তিনি বলেন, 'কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হয় সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। যে প্ল্যান্ট দুই বছরের, সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। বুঝেন কি অবস্থা!'
'ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে নয় বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা,' বলেন তিনি।
এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তা রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। এই প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত মিডিয়ার রিপোর্ট থেকেই নেয়া।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, চুরি, লুটপাটসহ অন্যান্য অপকর্মের চাপা পড়ে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, 'এ কারণে তারা (আওয়ামী লীগ) অভ্যন্তরীণ সুবিধা পাচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বারবার কথা বলতে হবে। তা নাহলে জনগণ আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও অপকর্ম এবং কীভাবে দেশকে ধ্বংস করেছে তা ভুলে যাবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের দল ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবে এবং সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।