প্রতিবেশীদের ভূখণ্ড নিজের দাবি করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল মানচিত্র’ প্রকাশের নিন্দা আরব দেশগুলোর
ইসরায়েল সরকারের আরবি ভাষার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে 'বাইবেলে বর্ণিত ইসরায়েল মানচিত্র'- প্রকাশের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন ও বিভিন্ন আরব দেশ। এই মানচিত্রে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল এবং প্রতিবেশী জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার ভূখণ্ডকে 'বৃহত্তর ইসরায়েল'- এর অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
এই পোস্টটি ফিলিস্তিন এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমন করার এবং আরও ফিলিস্তিন ও আরব ভূখণ্ড দখলের অপচেষ্টা দমনের আহ্বান জানিয়েছে।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র 'কঠোর ভাষায়' এই মানচিত্র প্রকাশের নিন্দা করেছেন এবং এটিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বানচালে ইসরায়েলের ডানপন্থীদের প্রচারিত 'মনগড়া দাবি ও বিভ্রম' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ঐতিহাসিক ইসরায়েলকে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করা' এই মানচিত্রটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের 'সুস্পষ্ট লঙ্ঘন'।
এছাড়া মন্ত্রণালয় সতর্ক করে জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে 'আরব ভূখণ্ডে সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা মোকাবিলায় ইসরায়েলি দখলদারদের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব পালনের' আহ্বান জানিয়েছে দোহা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে, এই মানচিত্রটিকে 'স্পষ্ট বাড়াবাড়ি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন' বলে নিন্দা জানিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াম এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, 'অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের আইনি মর্যাদা পরিবর্তনের লক্ষ্যে করা সব ধরনের উস্কানিমূলক আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।'
মন্ত্রণালয় 'দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য হুমকিস্বরূপ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের অবসান ঘটানোর' প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
একইভাবে, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মানচিত্র সম্পর্কিত 'ইসরায়েলি দাবি' প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, 'দখলদার কর্তৃপক্ষ তাদের দখলদারিত্ব জোরদার করতে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্লজ্জ আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের অভিযোগ তোলে'।
বিবৃতিতে এ অঞ্চলের দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং তাদের সীমান্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে, এই অঞ্চলের সংকটগুলো আর না বাড়াতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাগুলোকে ব্যাহত না করার আহ্বান জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি।
আরব লিগও ইসরায়েলের এই মানচিত্র প্রকাশের নিন্দা জানিয়েছে।
আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, 'এই কথিত মানচিত্র প্রকাশ কোনো তুচ্ছ ঘটনা নয়। এটি ইসরায়েলি সরকার এবং তার নেতাদের মধ্যে থাকা মৌলবাদ ও ধর্মীয় গোড়ামির বহিঃপ্রকাশ, যা ঐতিহাসিক মিথ্যাগুলোকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন ও প্রচারের পর্যায়ে পৌঁছেছে। '
বুধবার আহমেদ আবুল ঘেইত সতর্ক করে বলেছেন, এই উসকানি আগ্রাসন উসকে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।
ফিলিস্তিনের নিন্দা
হামাস এক টেলিগ্রাম বিবৃতিতে মানচিত্রে চিহ্নিত অঞ্চলগুলোকে 'ইসরায়েলি দখলদারিত্বের আগ্রাসী প্রকৃতি এবং সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের 'শত্রুতামূলক নীতি এবং পুনরাবৃত্তিমূলক প্রকাশ্য বিবৃতি... এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা মোকাবিলা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অব্যাহত ইহুদিবাদী অপরাধ বন্ধে আরব লিগ এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সরকারের দৃঢ় অবস্থান ও পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ওয়াফার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহও এই মানচিত্রের নিন্দা জানিয়েছেন এবং এটিকে 'সব আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রস্তাব ও আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন' বলে বর্ণনা করেছেন।