জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুপারিশ কমিশনের
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে তাদের মেয়াদ চার মাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার প্রস্তাব তাদের।
সংস্কার প্রস্তাবগুলো আজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অন্যন্য প্রস্তাবের মধ্যে আছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার জন্য আইন সংশোধন করা। একটি স্থায়ী 'স্থানীয় সরকার কমিশন' গঠন করা। স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণের বিধান করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জাতীয় বাজেটের ৩০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার বিধান করা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় যেসব সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সরকার পরিচালনায় রুটিন কার্যক্রমের বাইরেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধানের সংস্কার এবং প্রশাসনিক রদবদলের বিধান করা। স্থায়ী 'জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল' কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নাম চূড়ান্ত করার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও অন্য ২০ জন উপদেষ্টা নিয়োগের বিধান করা।
একই ব্যক্তি একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান নয়
একই ব্যক্তি যেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান না হন, সেই বিধান করা ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন
কমিশন নির্বাচনে না ভোটের বিধান রাখার প্রস্তাবের পাশাপাশি কোনো আসনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় নির্বাচনের কথা বলেছে। পাশাপাশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বন্ধের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে নির্বাচনি অনিয়মের জন্য অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীসহ নির্বাচন কমিশনকেও শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনকে আইন, আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা দিয়ে পূর্ণ স্বধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
এছাড়াও নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে যে ঋণ-বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা, গুরুতর মানবাধিকার এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থপাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাদের সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা, একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কিংবা তথ্য গোপনের কারণে আদালত কর্তৃক কোনো নির্বাচিত ব্যক্তির নির্বাচন বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার বিধান করা।
এমপিদের সুযোগ-সুবিধায় পরিবর্তনের প্রস্তাব
সংসদকে কার্যকর করতে সংসদ সদস্যদের পাওয়া সুযোগ-সুবিধায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে কমিশন। এতে আছে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি, আবাসিক প্লট, সব ধরনের প্রটোকল ও ভাতা পর্যালোচনা ও সংশোধন করা, একটি 'সংসদ সদস্য আচরণ আইন' প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের বাৎসরিকভাবে সম্পদের হিসাব প্রদান এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়সমূহ ঘোষণা করা, সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারণ করা ও সংসদ সদস্যদের জন্য বিশেষ প্রটোকলের অবসান করা।
এছাড়া সংস্কার কমিশন অনলাইনে ভোটব্যবস্থা চালুরও প্রস্তাব করেছে।