একতাই আমাদের শক্তি: ড. ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্টের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। একতার মধ্যে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সৃষ্টি, একতাই আমাদের শক্তি। ঐক্যের মাঝে এ সরকারের জন্ম হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। মনে সাহস পাই। কারণটা পরিষ্কার। কারণ এ সরকারের জন্ম হয়েছে ঐক্যের মাঝখানে। ঐক্যর দ্বারা এটার সৃষ্টি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সনদ ঘোষণার প্রেক্ষাপট বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, মাঝখানে একদিন ছাত্ররা এসে বলল- তারা একটা প্রক্লেমেশন সনদ ঘোষণা করবে, আমাকেও সেখানে থাকতে হবে। আমি বুঝতে চাইলাম কী প্রক্লেমেশন দিচ্ছে। তাদের কথা শুনে আমি বললাম যে এটা হবে না। আমার চাওয়াটাও হবে না, তোমাদেরও করা ঠিক হবে না।
ড. ইউনূস বলেন, আপনারা দোয়া করবেন, আমি যতদিন আছি এই একতা নিয়েই থাকব। কাজেই সে পথে আমাদের চলতে হবে। আমাদের সেই সাহসটা আপনারা দেন, যখন আমি আপনাদের সঙ্গে একত্রে বসি। আপনাদের দেখে আজকে খুবই সাহসী মনে হচ্ছে ৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৫টা ৫৪ মিনিটে ফরেন সার্ভিস একাডেমি ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এই বৈঠকে যোগ দেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বার্তাসংস্থা ইউএনবি জানায়, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে বৈঠক শুরু হয়। বিকেল ৪টা ১৭মিনিটের দিকে বৈঠকস্থলে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে যোগ দেওয়া রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্ব চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল, ইসলামি আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের নেতৃত্বের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও মূখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি'র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বাসদের মার্কবাদী সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণফ্রন্টের কামরুজ্জামান প্রমুখ।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার এই বৈঠকে অংশ নেয়নি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ১২ দলীয় জোট এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান নিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরির অংশ হিসেবে সর্বদলীয় এ বৈঠক আয়োজনের কথা মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জানিয়েছিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেছিলেন, "গত ১২/১৩ দিন ছাত্রদের ঘোষণাপত্র অনুকরণে একটা ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সবার সাথে আমাদের কথা বলা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত, নারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে, ছাত্রদের সাথে আমরা কথা বলেছি।
"তারা সবাই প্রক্লেমেশনের বিষয়ে একমত আছেন যে ঘোষণাপত্রটি দিতে হবে। কিন্তু ঘোষণাপত্রটি কবে এবং এর ভিতরে কী কী কন্টেন্ট থাকবে— সে বিষয়ে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। আগামী বৃহস্পতিবার আশা করি সবাই মিলে একটা সর্বদলীয় বৈঠক হবে।"