আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জের আবেদন খারিজ
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) এখতিয়ার চ্যালেঞ্জের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।
এখতিয়ার চ্যালেঞ্জের বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে শুনানির সুযোগ নেই এবং এটি সাংবিধানিক আদালতের বিষয় উল্লেখ করে আবেদনটি খারিজ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে, হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের আবেদন খারিজ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আদালত বলেছেন, জিয়াউল আহসানের করা আবেদনকে (প্রি-ম্যাচিউর) অপরিপক্ক বলে খারিজ করে দেওয়া হয়। এসব বিচারে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ তার পক্ষে আবেদনটিও করা হয়েছিল। আদালতে জিয়াউল আহসানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী ও অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার।
আর প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়।
গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে। এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার ও ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবার জন্য আইনটি করা হয়েছে কিন্ত জুলাই আগস্ট মাসে কোনো যুদ্ধ হয়নি, এবং যেহেতু বর্তমানে কোনো সংসদ নেই সুতরাং আইনের এ সংশোধনীটি বৈধ নয়। সেইসঙ্গে তাদের দাবি ছিল ২০২৪ সালে করা সংশোধনীতে গুম এর সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার কারণে এক ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া যৌক্তিক নয়।'
তিনি বলেন, 'কোনো আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে হলে সাংবিধানিক আদালতে যেতে হবে, সেটা করা হয়নি। সেইসঙ্গে এখতিয়ার নেই দাবি করে একই আদালতে তারা খালাসের আবেদন করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে থাকবে তার কোনো মৌলিক অধিকার থাকবে না এবং তার বিচারের জন্য করা কোনো আইন যদি সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণও হয় সেটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। সাংবিধানিকভাবে এক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয়া আছে।'
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'এটা আসলে তারাও জানেন যে, এ আবেদনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। মিডিয়াতে একটি হাইপ তৈরি করার জন্য তারা এই আবেদনটি করেছেন। যেহেতু আবেদনটি আজ খারিজ হয়েছে, এর ফলে বিচারটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলবে।'